“এক গ্লাস অন্ধকার”


শহরের অলিতে গলিতে
প্রতিটা বাড়ির সামনে
প্রতি দরজায় দাঁড়ানো
সারি সারি শব।
ওরা নিশ্চুপ।
নিস্তব্ধ হয়ে থাকার অভিশাপ
নিয়েই ওদের জন্ম।।


ওদের দৃষ্টি ফ্যাকাসে।
পার্থিব চাওয়ার ঘূর্ণিতে
ঘুরপাক খায় ওরা অনন্তর-
ওরা জানে না ওরা কে!
তাই অহর্নিশ নিজেকে সাজায়
অসম্ভব চাহিদার স্বচ্ছ লেবাসে,
পরিচয়ের তাগাদায়।।


প্রতিটা দরজায় ওরা দাঁড়িয়ে!
কোনও এক আহ্বানের অপেক্ষায়-
যে আহ্বান কোনদিন আসে না!
ওদের কোনও সৎকার হয় না!
ওদের শান্তির জন্য তর্পণ করে নি কেউ,
করে নি কোনও প্রার্থনা-অনুষ্ঠান,
ওদের তাই মুক্তি হয় না।।


আমি অলিতে গলিতে উন্মাদের মতো ছুটি-
একটা অন্তত জীবিত প্রাণের আশায়!
একটি জীবিত মুখ!
যার চামড়ার নিচে রক্তের আভাস মেলে,
দু’চোখে খেলা করে আনন্দ-বেদনা!
খেলে নিদেন পক্ষে অকৃত্রিম ভয়!
শুধুমাত্র কুণ্ঠিত নিরেট চাহনি নয়।।


আমার প্রসব-আর্তনাদ
থেমে যায় মাঝপথে-
আমার সন্তানের জন্য যে বিপুল উষ্ণতার প্রয়োজন
এখানে তা অনুপস্থিত।
আমি টের পাই
আরও অনেক প্রসবযন্ত্রণা
এখানে থেমে গেছে অনেক আগেই!


আমি ওদের থেকে পালাতে চাই-
বারে বারে তবু ওদের মুখোমুখি হতে থাকি-
প্রত্যেক ঘরের দুয়ারে দাঁড়ানো ওরা!
মৃতের শরীর নিয়ে,
ভাষাহীন চোখ নিয়ে,
শীতল উষ্ণতাকাতর স্পর্শ নিয়ে-
অর্ধসত্যের মত প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিটা প্রবেশমুখে।।


ছুটে ছুটে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে
আমি এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করি
প্রহরাবিহীন নিষিদ্ধ পণ্যের বিপণিতে-
এখানে জীবনীশক্তি বিক্রিত হয়
এক তিল পরিমাণ আত্মার দামে-
তৃষ্ণার্ত আমি বোধলুপ্ত হয়ে
আকণ্ঠ টেনে নেই মৃত্যুসুধা!


‘এ কি সভ্যতা নাকি তার অন্তর্গত ক্ষয়?’
আমি টের পাই আমার চেতনা থেকে
একে একে লোপ পেতে থাকে
আতঙ্ক, একাকীত্ব এবং
হৃৎপিন্ডে প্রচন্ড শক্তিতে গুঁজে দেয়া
কাঠের তীক্ষ্মফলার দন্ডের মতো
অবিরত চাপ।।


বুকের চাপ ধরা কষ্টটা
গলতে থাকে,
আমি শ্বাস নিতে পারি আবার-
তখনই আবিষ্কার করি-
এক বিধ্বস্ত যুবক কবির মতো,
আমিও হাতে নিয়ে বসে আছি
‘এক পেয়ালা গাঢ় অন্ধকার’!


(রচনাকালঃ ৩ অক্টোবর, ২০২২
রেফারেন্সঃ রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর “এক গ্লাস অন্ধকার”)