চাঁদের আলো
                    শ্যামা প্রসাদ ঘোষ


কাটোয়া শহরের নিঃশ্বাসের নীচে ভেসে গেছে ভাগীরথী
কয়েক কাঁটা দূরে ভাগীরথীর শরীরে মিশেছে অজয়ের ঔরস
মিথ্যে নয়,মিথ্যে হল -শাঁখাই ঘাটের সনাতন মাঝি
নদী পাড়ে লণ্ঠনের আলোয় ছিটেবেড়ার ঘরটা কাঁপতে কাঁপতে বলল
ও আসবে না-ঘরে আই-শুয়ে পর সনাতন
বেনাবনের পাতায় পাতায় ধারালো বাতাস বলল তাই
শরতের চিঠি হাতে কাশফুল বলল এক কথা
নৌকার চোখে এক ফোঁটা নোনাজল বলল- নাইবা এল
মেঘ সরে দাঁড়াল-নদীর জলে নেমে এল জ্যোৎস্না
আলো বলল ঢেউ গোন সনাতন,ঢেউ গোন
তেরো দিনের তেল মাখানো শিশুটা ভর দুপুরে গড়তে গড়তে
যেদিন পরেছিল ভরা গাঙে-শব্দ হয়েছিল টুপ
ছোট ছোট ঢেউ তুলে সেদিন হারিয়ে গিয়েছিল অর্পন
সেদিনের ছোটো ঢেউ গুলো বড়ো হয়ে ডাকছে     আজ বাবা
সনাতন নদীর জলে হাতবুলিয়ে বলল-অর্পণ আমার অর্পণ  
উপলব্ধি উষ্ণতার আদরে ঢেউ গুলো ঘুমিয়ে গেল
সনাতন ফিরে এল ছিটেবেড়ার ঘরে
লণ্ঠনের আলোটা উস্কে দিয়ে বলল-সে এসেছিল
ঘরটা কাঁপতে কাঁপতে  বলল-কখন কখন
জন্ম দিয়েই মরেছিল যে মা সেও যেন টুকি মেরে বলল
এসেছিল এসেছিল-আমার অর্পণ এসেছিল
শুধু চালের চোরা রাস্তা দিয়ে চাঁদটা হেসে বলল
সনাতন সত্যিটা মানতে শেখ,চালে নতুন খড় দে
নতুনের নেশায় নেতিয়ে পর পৃথিবীর পিঠে,সময় খুব কম
সনাতন আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বলল-তবু সে এসেছিল
যে চোখটা পৃথিবীতে এসেছিল প্রথম ,মেখে কাজল কালো
সেও জানত সত্যের চেয়ে বিশ্বাস বড়,যেমন চাঁদের আলো!!