আমার এক মৃন্ময় দ্বীপ ছিল।
সবুজ দীপ্তি দোলতো পাতায় পাতায়,
ফসল, রঙ্গিলা নটবর সাজে নাচতো মাঠে মাঠে,
ফুল পাখি প্রজাপতির প্রহর পোহাতো আনন্দে অনুরাগে,
হংস যুগল ক্লান্ত ঢেউ রেখে চলেতো অক্লান্ত,
মায়ের অনন্ত সোহাগ-সৌরভ ছড়াত হৃদয় জুড়ে,  
----- আমি জেনে গেছি ভালোবাসার অতনু স্পন্দনে
অপরূপ রূপের এই দ্বীপ আমার প্রাঞ্জল সাম্রাজ্য।


একদিন ময়ূরপঙ্খী বজরায় চড়ে সৌভাগ্য দেবী এসে ডাকে,
---- চলো, আলোকিত মর্মর নগরী তোমার বাসভূম,
না চাইতেই এসে যায় স্বপ্নের অপ্সরা,
স্বর্গের সুষমায় পূর্ণ, মানুষের এপাশ ওপাশ।
আমি চলে গেলাম কুহক নিশির ডাকের মতো
পিছু পিছু গোধুলির আরক্ত মোহিত প্রহরে।


তরঙ্গায়িত সুখেরা ঝুলে এখানে অতৃপ্ত মনের দেহে,
লুকোচুরি খেলতে খেলতে চেনারা হারিয়ে যায় দূরে অচেনায়,
ভালোবাসার মেকি রঙধনু রঙ আস্তরণে আকীর্ণ
মুখোশ-মানুষের অলিন্দ ক্ষতবিক্ষত হয় নিয়ত,
ফুলেরা ছড়ায়না সৌরভ, পাখি গায় যান্ত্রিক তানে
----- আমি এখানে হেমলক নির্যাস মেশানো রঙের
সুরম্য দীর্ঘ পোট্রের্টে জীবনকে সেঁটে দিলাম,
শুনেছি, আমার দ্বীপখানিও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে
আগ্রাসী ঘূর্ণিতে, ফসলে ধরেছে পঙ্গপাল।


এই নিরেট শৃঙ্খল ছিঁড়তে জানে নির্জন অরণ্য,
যেখানে আমার কোন পরিচয় নেই, দম্ভ নেই,
নেই অন্তর বাহির তফাতের সুবচন স্বজন, যোগবিয়োগের কদর্য প্রেতের জীবন নেই,
নেই পাওয়ার দর্পিত আভিজাত্য, না পাওয়ার দংশিত যন্ত্রণা,
আকাশের ঔদার্য খণ্ডিত করতে পারেনা কেউ,
নেই হেমলক মিশানো রঙ, আগ্রাসী ঘূর্ণি, নেই আমার ফসল সংহারী নিষ্ঠুর পঙ্গপালও
---- এই নির্জন অরণ্যে ফিরে যেতে চাই আমি অবারিত শান্তির জন্য অনন্ত প্রহর ধরে।