বৌদি,
ভালো আছো নিশ্চয়ই।
অবারিত শাপলার দিগন্ত জোড়া মাঠে
কলমি ডগার ফাঁকে ডাহুক ছানার লুকোচুরি,
সবুজ ফসলী জমিনের ঝিরিঝিরি বাতাসে দোদুল বাঁধা না মানা দুষ্ট আঁচল তোমার উড়ে,
গৃহস্থালি কাজের অবসরে উদাস দুপুরে
অব্যক্ত গুণ গুণ সুরে তুমি এখনো কি গাও
আনন্দ বেদনার হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্চ্ছনায়?
নিশ্চুপ রাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে
শেয়ালের কোরাসে এখনো কি আঁতকে উঠো
দুরুদুরু বুকে, ভয়ার্ত ফেকাসে চোখে?
অসুখে আড়ষ্ট শিশুর সাহস বাড়াতে
সুধীর ডাক্তার কি এখনো লাল মোড়কের চকলেট
বের করে দেয় পথে চলতে বা রুগ্নের শয্যায়?
চিরকুমার বসু মামু, আঁতু'দা কি বিয়ে বা বড় আয়োজনে
খাটে নিজের চেয়েও বেশি আপন হয়ে?    
মন্দিরের বটতলার ছড়ানো শেকড় জুড়ে এখনও আড্ডায় কি চলে শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতিক আলাপন?
পহেলা বৈশাখ, জাতীয় দিবস উদযাপন মহড়ায়
সংঘের কলকল কাকলী এখনো মুখর করে গ্রাম?
বড় পুকুর পাড়ের ঝাউ গাছে বাতসের শোঁশোঁ শব্দের ছন্দ দোলায় আজও আমায়।


কেমন আছি আমি?
--- আমি হিটলারের ইহুদি নিধনের গ্যাস চেম্বারে,
চেঙ্গিসের রক্তাভ তরবারির তীক্ষ্ণতার নৈকট্যে
---ভেজাল বাতাসে, বিষাক্ত খাদ্যে, খুনে দুর্ঘটনায় অপমৃত্যুর মর্গে
ভয়ার্ত, রুদ্ধশ্বাসে পোহাই অসহ্য  প্রহর।
আপন চেনা প্রিয়জনের মাঝে লুকোচুরির
নাটকে নিয়ন আলোর  মেকি রম্য মুখোশ পড়া নটরাজের মতো অলীক অহমিকার নির্মল হাসিহীন রাশভারী অভিনেতা আমি।
আমি হয়তো তোমাকে চিনতেও পারবোনা নিষ্ঠুর দম্ভে।  
হারানো মায়ের মতো আনন্দময়ী আর
বড় হওয়ায় পথে আমার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা তুমি,
আকৈশোর প্রেরণার অপলক ছায়ামানবী।
জেনে বেদনার নীল শরে বিদ্ধ হবে যে,
এখানে অপকটে কেউ দেয় না কিছুই,
পড়শীরা রোবোট সোফিয়ার মতো হাসে, ভালোবাসে, কাছে ডাকে নিরেট পাথরমনে।
আমিও পাথর মানব হয়ে গেছি বৈরী বিষময় বাতাসে,
হাজারো শৃঙ্খলের বেরীতে বন্দী ইটের পাঁজরে,
এখানে হাজারো প্রবেশ দ্বার, নাই পথ বেরুবার।


তোমায় ছুঁয়েছিল আকাশের বিশালতা,
সমুদ্রের ঔদার্য আর সামর্থ্যের নন্দিত আত্মবিশ্বাস,      
তোমার অলিন্দ নিংড়ানো মমতার খুশবো
এখানে আত্মকেন্দ্রিক ঘূর্ণিতে ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে।    
মনের মুকুরে মমতার সুরভিত পরাগ মেখে
তুমি হয়েছিলে আমার আরাধ্য সুরম্য প্রতিমা।
তুমি থাকো যেখানে বহেনা মনবতাহীন  বিষবাষ্প,  
যেখানে পাখি গায় অনাবিল, ফুলের সুগন্ধ পরাগ
আর
প্রজাপতির রঙে মানুষ গড়ে স্বপ্নের নিবাস আবাস।
                 -------------------