কোহিনূর


------- শ্যামল চৌধুরী


নির্মল সজল বহতা নদীর পাড়ে
অবারিত ফসলের মাঠ,
বৃক্ষবীথির স্নিগ্ধ শীতল তলে
আলো-আঁধারি লুকোচুরি,
সরিষা ফুলের বিস্তারে নাচে হলুদ নটবর,
কলমির ফাঁকে শাপলার বনে
ডাহুকের নিষ্পাপ নিমগ্ন প্রেম,
বর্ণীল ডানায় প্রজাপতি আবীর ছড়ায়
ফুলের সুরভিত বনে,
নিশীথ শিশিরে ফোটে আতশীর বর্ণালি
ভোরের আরক্ত অরুণ রাগে।


এই স্বপ্নময় সুষমা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দীপ্ত তরুণী কোহিনূর স্বপ্নিল চোখে
পৃথিবীর তাবৎ জনারণ্য গেঁথেছে
হৃদয়ের দিগন্ত ছোঁয়া মাঠ জুড়ে।


শ্রমে ম্রিয়মান বাবা
কিশোর তনয় আর স্বপ্নচারিনী তনয়ার
ঠোঁটে অম্লান হাসির তপস্যায় বিভোর,
মায়ের মমতার আঁচলের বিমুগ্ধ ছায়ায়
কদর্য সব ছলাকলা, জিঘাংসা
নিষ্প্রভ নতজানু হয়ে যায়
--- মৃন্ময়-কোমল স্পন্দিত হৃদয় বুকের ভেতর
বাজায় ভালোবাসার ছন্দময় রাগিণী।


বাবার লুকানো দীর্ঘশ্বাস, মায়ের
টানাপোড়েন
স্পর্শ করে কোহিনূরের উড্ডীন ফানুস মন
দহনের উষ্ণতায়, নিস্তব্ধ হয়ে যায়
বিচিন্তার গুঞ্জরিত নির্ঝর ধারা,
অনুজের আলোকিত জীবনের স্বপ্নবিলাস
তাকে প্রতিজ্ঞ করে অদম্য কর্মীর
শপথে।


সবুজের ঔদার্যের অতনু শৃঙ্খল ছিঁড়ে
বাবার ক্লান্তি, মায়ের অগোচর অশ্রুজল
রুদ্ধ করবেই সে,
ভাইয়ের স্বপ্নে পেখম গেঁথে উড়াবে
তাকে
নক্ষত্রালোকে অনাবিল আলো আহরণে।


---- তাকে যেতে হবে
নিষ্ঠুর নিরেট পাষাণ নগরে, যেখানে
সক্রেটিসেরা হেমলক নির্যাস পানে
নীলাভ নিথর হয়ে আছে,
বাঁধাহীন রক্তচোখা প্রলয়বাজ
আকন্ঠ পান করে বৈভব সুধা,
তরুণীর সম্ভ্রম ব্যবচ্ছেদ করে
কূট আর কড়ির তীক্ষ্ণ শস্ত্র,
নির্দয় ঘাতক চাকায চেপে মারে
নিষ্পাপ নির্বোধ শিশু,
গুম হয় দ্বন্দ্বী ও ধর্ষিতা,
বহুগামিতা, লুকোচুরি, প্রহসন আর
প্রকান্ড প্রশ্নবোধক চিহ্ন পিঠে অস্ফুট
বেদনায় আকীর্ন অভিনয় মঞ্চ-সংসার,
অসাম্যের মেরুদ্বয় যোজন যোজন দূরের
বাসিন্দা,
নিগৃহীতা ধর্ষিতা গৃহকর্মীর স্বপ্ন
ভাঙ্গে
অশ্রুজলে সিক্ত হয় আকাশছোঁয়া ইটের
পাজর,
প্রলোভনে জড়ায় প্রিয়ভাষী ধূর্ত
সবুজের সৌরভে স্নাত সরলাকে,
খুনের শোণিত আঘ্রানে শংকিত জনপদ,
বিত্তের গর্ব এখানে চেনাকে করে
অচেনা,
অপচয়ের হোলিতে গর্বানন্দ আর
নিভৃতে কাঁদে নিরন্ন মানুষ।


--- তবু যাবেই কোহিনূর
কম্পিত বুকে, ত্রস্ত পায়ে, ভয়ার্ত চোখে
এই বুভুক্ষু রাক্ষসপুরে, কন্টকাকীর্ন
রূপকথার প্রাচুর্যের নগরে।
-----------------------------