থরে বিথরে সাজানো সবুজের ঔদার্য আর
রূপকথার এই দেশে উড়ছিল শকুনের পাল।
রাতের ক্লান্তিতে ঘুম ঘুম চোখের
জনপদ, ছাত্রাবাস, পুলিশ ব্যারাকে
হানাদার অট্টহাসি আর নিষ্ঠুর জিঘাংসায়
এঁকেছিল লোহিত শোণিতের সর্পিল ধারা।
স্বপ্নচারী তরুণীর মঞ্জরিত স্বপ্নবহর  
বিদীর্ণ হলো কৃষ্ণরাতের ঘূর্ণিবার্তায়।
শিশুর অবিরত অশ্রুপাতেে প্রিয় পিতার  
রক্তমাখা নিথর শীতল দেহখানি তপ্ত হলো।
ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত ক্রন্দনরোল, মৃত্যুর মিছিল, নির্মম নিষ্ঠুরতা
নির্ঘুম নিষ্পলক নক্ষত্ররাজি দেখলো অহরাত,
দেখলো হাজার বছর ধরে সারল্যে স্নাত
বাংলার গহীন কালোরাত।
তুমিও নক্ষত্রের মতো অবিচল হয়ে দেখলে সব,
প্রতিশোধের নিরেট পাথর অঙ্গীকারে
নীরব  হয়ে গেলে।


বায়ান্ন'র স্বপ্নকপোত বুকের ভেতর পুষে,
মায়ের কাছে লাশটা তোমার পৌঁছে দিতে
অলিন্দের লাগোয়া পকেটে ঠিকানার চিরকুট রেখে
ঊনসত্তরের উত্তাল মিছিলে বজ্রকন্ঠের স্লোগানে
ভাঙেছিলে তুমি কারফিউ, ব্যারিকেড।


বর্ণিল বসন্ত প্রহরে স্পার্টাকাসের মতো
দ্রোহের দাবানলে জ্বালাতে সব জিঞ্জির
এবারও অভিযাত্রা তোমার হাজার বছর ধরে
লালিত আকাঙ্খার স্বাধীনতার জন্যে।


তোমার চোখে পেখম ছড়ানো স্বপ্নগুলিঃ
-- অনাবিল হাসির শিশু বাড়বে স্বাধীনতার আঘ্রাণে,
কৃষকের নবান্ন উৎসব বিস্তৃত হবে বছর জুড়ে,
জাল আার জলাভূমি হবে জেলের,
শ্রমিক ঘুরাবে উত্তরণের চাকা
--- পাবে যথার্থ মান আর মজুরি,
সাম্যের অতনু বাঁধেনেে দেশ হবে ভালোবাসার নন্দিত বিস্তার,
রক্তাভ চোখা দুঃশাসন দূর হবে চিরদিন,
পোহালো যার সুবর্ণ যৌবন, বেলা দ্বিপ্রহর
মানুষের তপ্ত অশ্রুপাত ঘুচাতে,
মা মৃত্তিকার সংকটে চঞ্চল যে
-- সে হবে মানুষের কান্ডারী,    
রাজপথে বইবেনা দাবির মিছিল
বুলেটের তীক্ষ্ণতায় বিদীর্ণ হবেনা
তরুণের বুকের পাঁজর,      
আলো অভিসারী প্রগতির রথচক্র ঘুরবে
এই মৃন্ময় কোমল সবুজের বিস্তারে।


ঝাঁক ঝাঁক বুলেটের বিরুদ্ধ স্রোতে
অনন্ত মধ্যাহ্ন রাতের কৃষ্ণকায় পর্দা টুটে
স্বাধীন নতুন দিনের সুপ্রভাত ফোটাতে
রণাঙ্গনে বিজয় অভিলাষী অদম্য বীর তুমি।
--- আয়নার ফ্রেমে বন্দী হলো বাবার যত স্মৃতি,
বোনের সম্ভ্রম ছিন্নভিন্ন হলো শকুনের নখরে,
ভস্মীভূত গ্রাম গ্রামান্তর করোটি আর অস্থিতে আকীর্ণ।
দুঃসহ বেদনায় মুহ্যমান বাংলার অন্ধকার আসমান ছিঁড়ে
ভূমিষ্ঠ করালে অরুণরাগে দীপ্ত স্বাধীনতা।


অর্ধশত প্রহর জুড়ে তোমার স্বপ্নফসল
ক্ষতবিক্ষত করলো প্রতিদ্বন্দ্বীর লেজুড়, বণিক আর ধূর্ত চাটুকার,
বণিক কেনে সহস্র ঘূর্ণিজয়ী মানুষের কান্ডারীর বৈঠা,
ধর্ষিতা হয় মানুষের আকাঙ্ক্ষার নীলপরী।    
স্বরাজ লাভের যোজন পরিক্রমায় অক্লান্ত
তুমি আজ বড়ই অবসন্ন,
বুভুক্ষু প্রেতের নগরীর বিষবাষ্পে ম্রিয়মাণ,
বেদনার নীল অপরাজিতা বরফ হয়ে আছে  তোমার বুকের গভীরে,      
তুমি চলে গেলে বড্ড অভিমানে নিষ্ক্রিয় নির্জনে।        
                        --------------------