শৈশবে জ্যাঠাতো দিদির সাথে বাল্যশিক্ষা বগলদাবা করে
ছুটতাম মন্দিরের চারপাশের বারান্দায় বসা টোলে।
শিক্ষার মিলনমেলার মহানায়ক মনে হতো গুরুজীকে।
চলন প্রতিবন্ধী অশীতিপর অবৈতনিক গুরুজী
ঝাপসা কাঁচের চশমা চোখে ওয়াকিং ক্রাচে ভর করে
বারান্দায় ঘুরে ঘুরে জ্ঞান বিলাতেন সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুকে।
বাল্যশিক্ষা'র পঙক্তিমালা আমৃত্যু মজ্জাগত করাতে
সুরে সুরে সমবেত আবৃত্তি করাতেন ----
চোরকে সকলে ধিক্কার দেয়,
লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে,
দুঃশীল সতত দুঃখেতে জড়িত,
অসৎ চরিত জগত ঘৃণিত......
গুরুজনকে ভক্তি করো।
"শিশুর পণ" তটস্থ করতাম পেন্ডুলামের দোলে---
... সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি.....
সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুঃখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে.....
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়া থাকি,
কিছুতেই কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি.....।


গুরুজী প্রাণিত করতেন, অন্যায় অসুন্দর অমানবিকতা
ছিন্নভিন্ন করে পৃথিবীকে সাজাতে বেহেশতের সুষমায়।
পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহরে বাল্যশিক্ষা আপ্তবাক্যের মতো
মস্তিষ্কের নিউরণে গাঁথা ছিল আবালবৃদ্ধবনিতার,
ম্রিয়মান হয়েছিল অনিয়ম নিয়ম করে তোলার আদিম আকাঙ্খা,
স্বাধীকার অর্জনে নিমগ্ন সন্ন্যাসীর মতো
দেখা দাও ! দেখা দাও! বলে বলে কেটেছে দীর্ঘ প্রস্তর প্রহর,
আত্মশক্তির প্রাবল্যে ব্যথিত জঠর ছিঁড়ে ভূমিষ্ট হলো স্বাধীনতা।
বাইশ পরিবারের পরিত্যক্ত প্রেতাত্মা হাজার গুণে পশিল
রাজনৈতিক নামাবলী পড়া শতবছরের গোলামের দেহে,
তারা শনির গ্রহণের মতো গিলছে মানুষের, সুজনের
সুখ সৌভাগ্য সমৃদ্ধি অভিলাষ অধিকার মান সম্ভ্রম।
চোর দুঃশীল অসৎ চরিত মিথ্যুক প্রতারক
এখন রক্তচোখা শাসক, রক্ষক, ধর্ম ধ্বজাধারী।
জ্ঞানী গুণী গুরুজন নিষ্কর্মা বৃদ্ধ-অন্ধকারের বাসিন্দা।
এই বন্ধ্যা স্বপ্নভঙ্গের দুর্দিনে গুরুজীর আহত স্বপ্নরা
উড়ন্ত ডানায় ছড়াবে কি স্বর্গের সুষমা বৈতালী বাতাসে! 
ফুল ফুটিয়ে সৌরভ ছুটিয়ে আনবে কি সুপ্রভাত বিপন্ন বাসভূমে!