অনেক বছর ধরে আমি হেঁটে চলেছি, পৃথিবীর কোণ
হতে কোণে। শুরুতে ছিলাম পশুর প্রায়
তখন চারিদিকে ঝোপ -জঙ্গল।
অশ্বত্থ -জাম-দেবদারু-ফনিমনসা,অজস্র কাঁটা
ঝোপের বন।
তখনও আগুন আসেনি মানুষের হাতে।
বৃস্টি, বজ্রপাত,দীর্ঘায়িত নদী,ক্ষয়ে যাওয়া
পূর্ণিমারচাঁদ,  ঋতুচক্র, সবই ছিলো।
একদিন চাকা এলো,যাযাবর  মানুষ পশু পালনের
সাথে শিখল চাষাবাদ।
পশুর মধ্যে থেকেও বুদ্ধিদিপ্ততায় পৃথিবীর অধিকার
মানুষ। তারপর কেটে গ্যাছে বহু যুগ বহু শতাব্দী
বহু হাজার লক্ষ বছর।
এসেছে সভ্যতার সাথে অসভ্যতা, সবল-দূর্বল।
গোষ্ঠীর সাথে গোষ্ঠীর ভালোবাসা আর নিষ্ঠুর
লড়াই দেখেছি আমি।
পোষাকি আর সভ্য মানুষের নির্মম বর্বরতাও
আমি দেখেছি, আমি দেখেছি মানুষের হাটে মানুষের
বেঁচা-কেনা। শিকলে বেঁধে নিয়ে যাওয়া সারিবদ্ধ
ক্রীতদাস ।
আমি দেখেছি কালো মানুষের উপর শ্বেতাঙ্গদের
নিষ্ঠুর পাশবিক অত্যাচার।
আমি দেখেছি প্রথম থেকে দ্বিতীয়ত বিশ্বযুদ্ধদ্বয়,
প্রত্যক্ষ করেছি পারমানবিক বোমা বিস্ফোরনে
নাগাসাকি আর হিরোসিমায় গলেযাওয়া, ঝলসে
যাওয়া মানুষের মৃত দেহ।
শুনেছি অর্ধ মৃত মানুষের অসহনীয় কাতর আর্তনাদ।
আমি একটা গোটা পৃথিবীকে টুকরো টুকরো
সীীমানায় বিচ্ছিন্ন হতে দেখেছি।
আমি গ্রীক-রোমানের যুদ্ধ দেখেছি।
দেখেছি সূর্যাস্তহীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিধি।
আমি হিটলার-মুশোলীনি লেনিনকে দেখেছি,
আমি রনাঙ্গনে বীর নেতাজীকে দেখেছি।
আবার শিকাগো ধর্ম মহাসভায় গেরুয়া ধারি
সন্ন্যাসী স্বামীজীর ভাষন শুনেছি।
আমি দেখেছি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া,  খন্ডিত
রাশিয়া, চীনের লাল ফৌজ।
আমি সিরাজদৌলা আর মীরজাফরকে দেখেছি।
আমি উত্থান দখেছি পতন দেখেছি।
আমি ক্রুশ বয়ে নিয়ে যাওয়া যিশুকে আমার
সামনে ক্রুশ বিদ্ধ হতে দেখেছি।
আমি আফ্রিকার  জঙ্গলে ক্ষুধার্ত  চিতাকে
শিকারের পর অন্যদের সঙ্গে নিয়ে খেতে দেখেছি।
আমি সাগরে ডুবন্ত মানুষকে বাঁচাতে
ডলফিনের মানবিক প্রচেস্টা দেখেছি ।
আমি মহাভারত -বাইবেল-কোরান-গ্রন্থ সাহিব
আমি ত্রিপিটক পড়েছি।
সব ধর্মই বলেছে-"ঘৃনা নয়,ভালোবাসো "।
তবুও হিংস্র বিদ্বেষে বারে বারে রক্তে ভিজেছে
ঈশ্বরের পৃথিবীর এ-মাটি।
আমি মিশরের নীল নদে সাঁতার কেটেছি।
আবার গঙ্গার ভাটার স্রোতে নৌকা ভাসিয়ে
ভাটিয়ালী গেয়েছি।
আমি দেখেছি গান গেয়ে ভিক্ষা করা অন্ধ ভিখারিকে, আবার ব্যাস্ততম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীকে।আমি জন্ম দেখেছি,মৃত্যু দেখেছি, দেখেছি
চার কাঁধে উঠে মানুষের শেষ যাওয়া।
কেউ গোরে, কেউ আগুনে। কেউ সময়ে কেউ আবার অসময়ে। যেতে হবেই। এই দীর্ঘ যুগের
পথ পরিক্রমায় আমি দেখেছি অস্ত্র  যখন সংগীত
হয়, অন্ধকার ফিকে হয়ে ভোরের মূর্চ্ছনায় পূবের
সিঁথি রাঙিয়ে চোখ মেলে ঊষা।
তার জ্যোতির্ময়তায় জেগে ওঠে স্নিগ্ধ খুশির পৃথিবী।
এ-মাটি তখন স্বর্গ হয়ে ওঠে।
আরর অস্ত্র যখন বিচ্ছিন্নতার ভ্রষ্ট সুরে অ-সুর হয়,
তখন দখিনা বাতাসে হানাদার হয়ে বারুদ গন্ধ
ছুটে আসে।
সুন্দরের সেই অস্তগামীতায় অন্ধকার অধিকার
নেয় আলোর পৃথিবীর।
তখনই পাহাড় ফসলের ক্ষেত সমতল রাঙিয়ে
প্রানের ঝরা রক্তে অভিশাপ মেখে রেঙে ওঠে
গঙ্গা,মেঘনা, টেমস্, হোয়াংহো, মিসিসিপি,
কলোরাডো আর ভল্গার মতো পৃথিবীর অজস্র
তরঙ্গায়িত নদীর স্রোতধারা। সৃষ্টির সেই পৈশাচিক
উল্লাসে কেঁপে ওঠেন শ্রষ্টা তাই হয়তো
আছরে পরে সুনামি, নেমে আসে অনাবৃষ্টি,  
খরা, পৃথিবী তার সবুজ হারিয়ে রুক্ষ হয়ে ওঠে।
তাই নিস্প্রভ বুদ্ধিদীপ্ততায় আমি  শ্রেষ্ঠ হয়েও
হেরে যায় বারে বারে আমারই কাছে।