◼️ খাদ্য-বিচার
-শ্যামল কুমার সরকার


এক বনে এক গোরু ছিল অশেষ বিদ্যা তার,
পশু হয়েও বিদ্যার জন্যে পেল পুরস্কার।
সবার সাথে সুহৃদ চলন অযুত-সুনাম তাই,
এমন বিদ্বান কোথাও নাই,  ধন্যি ধন্যি গাই।
গোরুর এমন বিদ্যার খবর সিংহ পেল টের-
অন্যরকম এ সিংহটা দর্শনবিদ্যা ঢের।
গোরুর সাথে করতে আলাপ সিংহের আগমন ;
শুনে গোরু সুঅভ্যর্থনায় শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান।


সিংহভাইকে বসতে দিলো শীতলপাটি পেতে,
বন থেকেও পশু-পাখি আসলো শতে শতে।
দুই বিদ্বানে করবে আলাপ বিষয়টি কী জানি!
সারাদেশের হরেকজন্তুু আসলো শুনতে বাণী।
সাপ-বাদুর আর টিকটিকিরা আসলো ট্রেনে চেপে,
শিয়াল-কুকুর ট্রলারে ঘুরে আসলো ঠিক ঐ দ্বীপে।
দুপুর তখন দুইটা বাজে আলাপ শুরু হলো
আলাপ-বিষয়  "খাদ্য-বিচার" আলাপ শুনবো চলো।


অনেক প্রাণীর ভীড় জমেছে বসার সুন্দর আসন,
উচ্চসাউন্ড-সুব্যবস্থা শুনবো জ্ঞানীর ভাষণ।
সিংহ মশাই মঞ্চে এসে সুন্দর সদালাপে,
কোন্ প্রাণী কীবা খাবে বলছেন ধাপে ধাপে।
গোরুর কাছে জটিলপ্রশ্ন সিংহ করল খাড়া,
বিদ্বানগোরু নির্ভয়ে তার প্রশ্নে দিলো সাড়া।
দার্শনিক লোক সিংহ-রাজা প্রশ্ন তোলে গর্জনে,
"কোন্ প্রাণীর কেমন খাবার " গবেষণা চাই এক্ষনে।


বিদ্বান গোরু মঞ্চে এসে বিনীত কন্ঠে বলে,
সব প্রাণী যাই খাচ্ছে ঈশ্বরাশিস ফলে।
তার যে কতক যুক্তি আছে, শোন, বলছি খুলে,
কেনিন দাঁতটা লম্বা যাহার শাক খেওনা ভুলে।
উপরপাটে দু-দন্ত নিচের পাটেও দুটি
এমন চারটি লম্বা দাঁতে মাংস কাটাকুটি।
আরো একটা সত্য আছে, শোন, সিংহদাদা!
মাংসাশী  প্রাণী যারা পানি চাটে সদা।
জিহ্বায় চেটে পানি খায় মাংসাশী প্রাণী সব,
তৃণভোজী প্রাণীগুলো গিলে ঢকর ঢক।
নেড়ি কুকুর দাঁড়িয়ে বলে,  ঠিক বলেছ, গোরু।
বিড়াল-কুকুর-শেয়াল-সিংহ  কেউ খাবে না তরু।
কারণ তোমারা পানি চাটো আমি দেখছি চোখে,
গোরুতে আর ছাগলেরা খায় তো ঢোকে ঢোকে।
ঢোক গিলে খায় দাঁত লম্বা নয় এরা তৃণভোজী।
লম্বা কেনিন (দন্ত) যাদের খেয়ো মাংস রোজই।
বাদুড় বলল সুন্দর  সত্য বললে তোমারা ভাই,
কেনিন দাঁত নাই বলে তাই ফলমূল মোরা খাই।
পাখিরা সব বলল হেসে সব-যে খেতে নাই,
বিধিমতো খাবার খেয়ে আমরা  বাঁচতে চাই।
সিংহ জানান, কত্ত কিছু জানলাম আজি ভাই...


শিয়াল মামা বলল হেঁকে আমার একটা আছে কথা,
মানুষের তো কেনিন নাই পানিও চেটে খায় না রে তা!
তবে কেন মানুষগুলো আবাধে প্রাণ করে নিধন?
এতোই কী রে আমিষ দরকার বলো  সভা-সদগণ!
হাতি বলল, যেমন খাবে তেমন বুদ্ধি  দেখ না ঐ জনগণ।


সিংহ বলল, সবাই করি খাদ্য বিচার খুজিয়া বিজ্ঞান ।
মানুষ শুধু ইচ্ছে মতন করে আহার-পান!


৬ মে  ২০২১ খ্রিঃ
কেরানীগঞ্জ।


🔳 খাদ্য-বিবাদ
-শ্যামল কুমার সরকার


একদা এসেছে লোক সে জীববিজ্ঞানী
কথায় কথায় সে যে ছুড়ে দেয় বাণী।
এ-বিজ্ঞানী শুধু দেখি মাংস ভালো খায়,
মাংস খাইয়ে ভুড়ি বড্ড কত্ত বেড়ে যায়!
হাঠাৎ সেখানে এলো জীবদরদী যে,
কোনোজীব কোনোদিন মারেন  নাই সে,
নিরামিষ খেয়ে শুধু স্বস্তিকথা বলে
সৎ কাজে মত্ত, সত্য নিয়ে চলে।


নিরামিষ খাও ভাই, ও, জীবদরদী?
তুচ্ছবাক্য আরো কত বলে নিরবধি।
তাতেও বিজ্ঞানী নাই হলো খুব ক্ষান্ত
নিরামিষ কেন খাও,  এ ভাই, শুনছো তো?
নিরামিষে লতাপাতা খাচ্ছ তুমি ঢের!
গাছেরও তো আছে প্রাণ প্রশ্ন আমাদের:
তবে কেন লতাপাতা তুমি পারো খেতে?
উত্তর যে নাই দিলে নাহি দিব যেতে।


জীবদরদী তো স্নিগ্ধস্বরে বলে, ভাই,
তর্কে জীবপ্রেম বোঝার উপায় নাই।
লতামাথা দিলে কেটে গজিয়ে সে উঠে,
জীবের যে মাথা কাটো, পড়ে ভূমে লুটে।
আমি অতি পাপমতি কীবা বলি ভাই,
ওদের যে ব্যথা বোঝে সে বিজ্ঞানী নাই!