প্রিয় সুফিকবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যে টিপপ্রিয়তা ঢের স্বচ্ছ, সৌন্দর্যময় ও পবিত্র হয়ে ফুটে উঠেছে। প্রেরিতের স্মরণে পবিত্র নাম স্মরণ এলে- তা যেন চোখের কাজল করেই ধরে রাখে- আর, কপালের টিপে খুব  জ্বলে ওঠে যেন! তাই ভক্তির সাক্ষরে বৃত্তির মুক্তিতে তিনি উচ্চারণ করে উঠলেন-
"হে প্রিয় নবী, রসুল আমার!
পরেছি আভরণ নামেরই তোমার॥
নয়নের কাজলে তব নাম,
ললাটের টিপে জ্বলে তব নাম;'
(উদ্ধৃতি-সূত্র: নজরুল-রচনাবলী, ১০ম খণ্ড, বাংলা একাডেমী নজরুল-জন্মশতবর্ষ সংস্করণ ২০০৯, পৃ২৪৩, ৩০০-৫৩৮।)


কবির চেতনায় নারীসাজ লাভ করে এক প্রকৃত বাঙালিয়ানার প্রতিকৃতি। কোনো এক চৈতালি সন্ধেবেলায় তাঁর প্রিয়াকে চাঁদের থেকেও সৌন্দর্যময়ী দেখতেন, হৃদয়ভরা আবেগ নিয়ে তাঁর প্রিয়ার কপালে টিপ পরার আবেদন জানাতেন,  জানাতেন পায়ে আলতা পরার আবেদন। তাই কবি বলে উঠেছিলেন-
"পরো পরো চৈতালী-সাঁঝে কুস্‌মী শাড়ি।
আজি তোমার রূপের সাথে চাঁদের আড়ি॥
পরো ললাটে কাঁচপোকার টিপ,
তুমি আলতা পরো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি॥"
(উদ্ধৃতি-সূত্র: নজরুল-রচনাবলী, ৫ম খণ্ড; বাংলা একাডেমী নজরুল-জন্মশতবর্ষ সংস্করণ
প্রথম পুনর্মুদ্রণ ২০১১; পৃ২৩৪, ২৭৯-৪৯২।)


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক জাগরণী মন্ত্রকবিতায় টেনে এনেছেন টিপের উপমা। টিপ যেন সূর্যসম তাঁর কাব্যে। তিনি উদাত্ত আহ্বানে বললেন-
"জাগো উদয়-প্রাতের ঊষা রক্ত-শিখা,
জাগো সূর্যের টিপ পরি' জয়ন্তিকা!
জাগো ক্রোধাগ্নি অবমানিতের বক্ষে
জাগো শোকাগ্নি নিরশ্রু রাঙা চক্ষে!
জাগো নিশ্চুপ সয়ে-থাকা ধূমায়িত রোষ,
জাগো বাণী মূক-কণ্ঠে অশনি-নির্ঘোষ!
জাগো খাণ্ডব-দাহন ভীমা দাহিকা,
মরু বিদ্রূপ-হাসি জাগো হে মরীচিকা!"
(উদ্ধৃতি-সূত্র: নজরুল-রচনাবলী, ৪র্থ খণ্ড, বাংলা একাডেমী নজরুল-জন্মশতবর্ষ সংস্করণ  প্রথম পুনর্মুদ্রণ ২০১১; পৃ১০২, ১৪৭-৫১৪।)