মা-বাবা দিবসের আর্তনাদ


আমাকে অভুক্ত রেখে, কত জনের মিটিয়েছ যে সাধ;
ওষুধ আননি, এনেছ খেলনা, মুখে বলে যাও 'অভাব'।
বাসায় এসেই প্রথম কুশল স্ত্রী, পুত্র-কন্যা আর শ্বাশুরী;
পিতার খোঁজ নিতে দেরি, টিপ্পনী কাটো বেশ রাশ ভারী।
ঘাটের মরা মরে না কেন, সম্পত্তি হবে কবে তোমার?
কৌশলে নিয়েছ সহায় সম্পদ, পেনশনের টাকা আমার।
পাপিষ্ঠ হাত, জন্মদাতার গলা টিপে ধরে, সবার অগচোরে;
অবশেষে নিঃস্ব বাবার ঠাঁই হয়, বস্তাবন্দি রাস্তার মোড়ে।


মায়ের বয়স কালের স্নেহ ভালোবাসা গেছ সব ভুলে;
মা'র অতৃপ্ত আশা, ভালোলাগা থেকে যায় অন্তরালে।
এখন পরামর্শও কেমন যেন লাগে বিষ বাষ্পের মতো;
স্বজনের আড্ডা জমে কত রঙে, না বলা কথা যত।
আমি এলে, 'মা' তুমি বুঝবে না এসব, এখন যাও চলে;
মায়ের ভালোবাসা আজ হারিয়েছে, সময়ের অতলে।


আমার অসুখে তোমার হাতের যত্ন, পাই না কোনো সময়,
রেখেছ কতো সেবিকা, সেবার অবহেলা যেন না হয়।
তুমি ব্যস্ত, সময় পাও-না, আছে যে কত শত ব্যস্ততা;
আমিও কি সেবা দিতাম তোমাদের, দিয়ে সেবিকা?
কত যে নির্ঘুম দুঃসপ্নের রাত, কাটিয়েছি শিয়রে বসে;
কখনো কি দূরে রয়েছি, কোনো ব্যস্ততার অজুহাতে?
তোমার ছোঁয়াচে রোগে, আমি কখনো পাইনি ভয়;
বুকে তুলে নিয়েছি, জীবন বাজী রেখে, ভয়কে করে জয়।
কায়মনে প্রার্থণা কি করিনি, আমার প্রভুর কাছে!
নিজ জীবনের বিনিময়ে, তোমার জীবন যেন বাঁচে?
এখন আমার দেহ টুকরো করে রাখো ডিপ ফ্রিজে,
পেনশনের  টাকা যেন আসে নির্বিঘ্নে নিরাপদে।


মৃতের আত্মা জান্নাতি হবে, পাবে স্বর্গধাম,
আমাদের শান্তির তরে তোমাদের চতুর ধূমধাম।
বছর ঘুরলেই মৃত্যু বার্ষিকীর যত আয়োজন;
আনাগোনা বাবুর্চী, পুরোহিত, ভান্ত, মোল্লা, স্বজন।
মৃত মা-বাবার শান্তির জন্য এখন চলে ছোট বড়ো জীব হত্যা,
কতো সুস্বাদু বিরিয়ানী খিচুরী তেহারী, শেষে মিষ্টি জর্দা।
অনাহারি খেয়ে দোয়া করার দৃশ্য, বন্দি করো ক্যামেরায়,
মিডিয়ার সামনে কতক অভুক্ত পেটের জ্বালা ঘুচায়।
ভালো খাবার চলে যায়, নিজ গৃহে ক্যামেরার আবডালে;
কাঁটা চামচে, ড্রিংক্সযোগে মজা লুটে পোষাকী সকলে।
আমাদের আত্মা হাসে, দেখে এ মহাযজ্ঞ, মহাকান্ড;
আবার কাঁদে, জীবদ্দশায় শান্তি যে দেয়নি এক দন্ড।


জীবিত মা বাবার জন্য গড়েছ কতো যে সুখের নিবাস;
দিয়েছ কত নান্দনিক নাম 'বৃদ্ধাশ্রম',  'বৃদ্ধনিবাস'।
বিশেষ দিনে ভালো খাবার পাঠাতে ভুল হয় না তোমার;
যেমন কয়েদী পায় ইদ, স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ খাবার।

বন্ধ করো, এসব ভন্ডামী, লোক দেখানো যত লোকাচার!
মা-বাবা দিবসের মায়াকান্না, শুধু  কি বছরে একবার?
বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে আমাদের, লজ্জা হয় না তোমার?
মা-বাবা দিবস পালন করে, হও 'মানুষ' হওয়ার দাবীদার!
পাষান্ড, নরাধম তোমরা, এ মা-বাবা দিবস চাই না আর।