হতভাগা বলেছিলো সে ধেয়ে আসছে!
বলেছিলো সে সবার আগে!
বলেছিলো আক্রান্ত হবে বিশ্ব চরাচর!
কিন্তু বিশ্বাস করেনি অতি আত্নবিশ্বাসী মিথ্যুকেরা!
কারারুদ্ধ সে দুর্ভাগা অস্তমিত সূর্যের সাথে দেখেছিলো মানবজাতির ক্রান্তিলগ্ন!
কিন্তু একদা তার কথাই যে সত্যি হলো!
বিশ্বভুবনে ধেয়ে এলো করোনা নামক এক মহাবিপর্যয়!
অকাট্য সত্য বলায় খুলে গেলো তার কারার দরজা!
মুক্ত হয়ে সে ফিরে গেলো মানবতার মহান পেশায়!
কিন্তু অভাগা বাঁচতে পারলো না!
নিষ্ঠুর করোনা প্রথমেই কেড়ে নিলো তার মহৎপ্রাণ!


তারপর সে মিশে গেলো আধুনিক জনস্রোতে!
ছড়িয়ে যেতে থাকলো মানুষ থেকে মানুষে!
ক্ষণকালেই দখল করে নিলো
দেশ থেকে দেশান্তর, রাজ্য থেকে সাম্রাজ্যকে!
ক্ষমতার অহমিকা, প্রযুক্তির গৌরব, মারণাস্ত্রের দৌড়াত্ন্যকে
কেবল আকারের ক্ষুদ্রতা দিয়েই পর্যদুস্ত করে দিলো ধূলিধরায়!
হইচই পড়ে গেলো সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে!


গবেষণা, প্রচারণা, মতৈক্য, মতপার্থক্যের ডামাডেলো
অস্থির হয়ে পড়ে প্রতিটি রাষ্ট্র!
দৈন্যতায় মুখ লুকালো সভ্যতার উৎকর্ষিত চিকিৎসাবিজ্ঞান!
সফেদ চুলের বিশ্লেষণ পায় না কোন উপায়!
"প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম"
পুরানো এ প্রবাদ আবার বহুদিন পর সমাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠে!
হাত হাত রেখে চলার প্রতিশ্রতি হঠাত পড়ে যায় হুমকীর মুখে!
বোরখার আড়ালে থাকা নারীদের দেখাদেখি
বিশ্ববাসী শিখে গেলো মুখ ঢেকে রাখার বিস্তর প্রয়োজনীয়তা!
জল্পনা কল্পনা আর সুরক্ষার মাপকাঠীতে
হঠাতই আটকে যায় কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা!


হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের হৃদকম্পন বেড়েই চলেছে দুরন্ত গতিতে!
মৃত্যুভয় তাড়া করে ফিরছে তাদের নির্ঘুম চোখগুলিকে!
চিকিৎসকেরা কর্তব্য আর প্রাণভয়ের বিভেদতলে দাঁড়িয়ে আজ অদম্য ব্যস্ত!
ভয়ে আতংকে নিরুপায় অত্যাচারী শাসকেরা আজ সরকারি বাসভবনে বসে স্তব্ধ!
লক্ষ- কোটি মানুষ আজ প্রাণ বাঁচাতে গৃহে অবরুদ্ধ!


কিন্তু আকস্মিক কর্মহীন মানুষেরা বেকার বসে থাকে না!
হঠাৎ কেনো এ আলামত? কি তার কারণ?
উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৌতুহলী মনন আর অলস মস্তিষ্ক!
সৃষ্টিকর্তার সঞ্চিত রোষানল কিংবা বেটে নকলবীদদের কূট কৌশল
এ নিয়ে কুতর্কে ভেসে যায় কৃত্রিম নীল জগৎ!
সহসা অচল প্রতিষ্ঠানের নিরলস কর্মীদের
হৃদয়ের বন্ধন মাথাচারা দিয়ে ওঠে!
বিলেতে ভাগ্যের চাকা অতি দ্রুত ঘুরাতে যাওয়া
বঙ্গসন্তানেরা ঘরে ফিরতে চায় প্রাণপণে!
বহুদিন ছুটির ঘণ্টা না শোনা ব্যকুল শ্রমিকেরা ছুটে আসে উড়োজাহাজে চড়ে!
স্বর্ণ উদ্ধারে অতিশয় দক্ষ ও করিৎকর্মা কর্মীরা
কেনো যেনো কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে হঠাৎ!
অভাবী বিমানবন্দরের ফাটল টপকে পালিয়ে
বৈদেশিক মুদ্রার যোগানদাতারা দ্রুত ছুটে যায় মায়ের কোলে!
কেউ কেউ নতুন করে ঘর বাঁধে, স্ত্রীর মোহরানা অাদায় করে তাকে আক্রান্ত করে!
কেউবা আল্লাহকে দায় ঠেকিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে যায়
দূর সমুদ্রের লোনা পানিতে বহুদিন স্নানবিহীন অঙ্গ ধৌত করতে!
কেউবা ফিরে এসেও রোগ চেপে পালিয়ে বেড়ায়!
মূর্খতার পরিণতিতে বাংলা মা
এখন ভীত- সন্ত্রস্ত্র তার কোটি কোটি সুসন্তান নিয়ে!


কিন্তু গলাবাজির ঘাড়ে কামড়ে দিতে পারেনি এ দুর্যোগ!
এখনও রঙ্গমঞ্চ থেকে ভেসে আসে
দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্জিত সফলতার মিথ্যে পরিসংখ্যান নিয়ে বড় বড় বুলি!
ওদিকে ছা - পোষা বাঙালীরাও চুপচাপ বসে থাকে না!
বক্তা, বিশেষজ্ঞ, নব্য পন্ডিত কিংবা ভাইরালকারী
সবাই দিন রাত এখন ব্যস্ত হয়ে সরকারের গুষ্টি উদ্ধার দেয়ার কর্মে লিপ্ত!
কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না!
মৃত্যুর গণিত ক্রমেই বিবর্ধিত হয়!
লাশের অন্তিম হয় যাত্রা আজ কাধে নয় এখন লাঠিতে!
প্রাণ ভীতি নিয়ে স্বজনেরা অশ্রুসিক্ত নয়নে আপনজনকে বিদায় দেয় বড্ড দূর থেকে!
দুশ্চিন্তা, হতাশা, সংশয় সবকিছু নিয়ে বিশ্ববাসী আজ আকস্মিক ধার্মীক!
তবুও মহাবিপর্যয় আরো যেনো জেঁকে বসতে চাইছে দিন দিন!
মানবজাতি তাই আজ ক্রমে ক্রমে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন!


২১/০৩/২০২০
নারায়ণগঞ্জ


উৎসর্গঃ Suchitra Bhaumik