ছোটবেলা রেলগাড়ি চড়ার সুখস্মৃতি আজও উজ্জ্বল হয়ে জেগে রয়েছে মনের কোনে ।  বাবার সঙ্গে প্রথম ট্রেনে চড়ে গ্রামের বাড়ী যাওয়ার কথা  মনে হলে আজও রোমাঞ্চিত হই ।  ষ্টেশনে লোকের ভিড়, কুলীর হাঁক ডাক, ফেরিওয়ালাদের চিৎকার, চা-ওয়ালা, বাদাম ভাজার অপূর্ব স্বাদ- এই ছবিগুলো কোনোদিনও ভোলার নয়।  ষ্টেশনে ঢং ঢং করে ঘণ্টি পড়া ।  কয়লার ইঞ্জিনের কু - কু ডাক ও ঝিক্ ঝিক্ শব্দে চারিদিক মুখরিত করে চলা ।   ট্রেনের বেঞ্চিতে বসে দুলে দুলে দোল খাওয়ার মজা পাওয়া ।  সবুজ মাঠ – সোনালী ফসল – নদী – জলাভূমি – জানালয় ছবির মত একে একে দ্রুত সরে যাওয়া – মাঠে ছেলেদের খুশীতে হাত নেড়ে রেলগাড়িকে স্বাগত জানান - এই চিরন্তনী চিত্র মনকে দোলা দেবেই ।  তাই আজও যখন দূর থেকে কোন ট্রেনকে যেতে দেখি মন উদাস হয়ে যায়।  ইচ্ছে করে গাড়ি চড়ে কোথাও দূর দেশে চলে যাই যেখানে দেনাপাওনা-হীন অপার শান্তি সদা প্রবাহিত ।


পরাধীন ভারতে ব্রিটিশরা প্রথম যাত্রী রেলগাড়ি চালু করে মুম্বাই থেকে থানে ১৮৫৩ সালে ।  আজ ১৬১ বছরের উপর রেলকে নিয়ে মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই।  আজ মাকড়সার জালের মত পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সারা দেশে ট্রেনলাইন পাতা ।  স্টিম ও ডিজেলের পর এখন ইলেকক্ট্রিক ইঞ্জিনে দ্রুতগামী সুবিধাযুক্ত আধুনিক ট্রেনে হাজার হাজার ষ্টেশনে লক্ষ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন।  বিচিত্র বেশভূষা, বিবিধ ভাষা, রকমারি আচার ব্যবহার, বিভিন্ন ধর্ম - সবাইকে নিয়ে রেল যেন চলেছে তাঁর শেষ গন্তব্য মহামানবের মিলন ক্ষেত্রে - যেথায় বিরাজিত চিরন্তন শান্তি ।  


কিন্তু মনটা কালিমায় ভরে যায় যখন ষ্টেশন চত্বরে দেখি ভিখারিদের ভিড় ।  শিশু কোলে নিয়ে অনাহার-ক্লিষ্ট অসহায় ভিখারিনী মা মাটিতে ফেলে দেয়া রুটির টুকরো কুড়িয়ে খাচ্ছে ।  ট্রেনের কামরা ঝাড়ু দিয়ে আশ্রয়হীন বালক হাত পেতে ভিক্ষে করে ।  উষ্কখুষ্ক লাল-চুল ছেড়া জামা পরা  বালিকা হাত পেতে ভিক্ষে চায় ।  দেখে চমকে উঠি – চেয়ে দেখি এরাতো আমারই ছেলে মেয়ে আমারই আপনজন ।  বিকৃত সভ্যতার নিষ্ঠুর ঝড়ে নিজ ভূমি থেকে সমূলে উৎপাটিত আহত আত্মা ।


এক সমীক্ষায় জানা যায় সারা ভারতে বছরে প্রায় ১,২০,০০০ শিশু নিজেদের ঘর বাড়ী ছেড়ে রেলস্টেশনে আশ্রয় নেয় ।  অর্থাৎ প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি শিশু রেল প্ল্যাটফর্মে আসে ।  সাংসারিক দরিদ্রতা ও পারিবারিক হিংসা এঁদেরকে বাড়ী ছাড়তে বাধ্য করে ।  বিনা টিকিটে রেলে চড়ে এঁরা শহরে চলে আসে উন্নত জীবন ও নিজেদের স্বপ্ন পূরণের আশায় ।  ভীত সন্ত্রস্ত এই শিশুরা বদ লোকের পাল্লায় পড়ে এবং নতুন ধরণের শোষণের  
শিকার হয়।  শহরে শিশু শ্রমের চাহিদা প্রচুর আর এঁরা সেই সস্তা শ্রমের জোগান দেয় ।


বহুদিন থেকেই এই শিশুদের আমি রেল ষ্টেশনে দেখি আর ভাবি এঁদের মুক্তির জন্য যদি কেউ এগিয়ে আসে কেমন হয়।
এঁদের নিয়ে একটা কবিতা লেখার ইচ্ছে বহুদিনের । “জুতো পালিশ” এঁদের নিয়ে আমার লেখা কবিতা তাঁদের নামেই উৎসর্গ করলাম ।
কবিতাটা ২৮শে এপ্রিল লেখা এবং পোস্ট করা ।  পড়ে কবি বন্ধুদের কেমন লাগল জানালে খুশী হব ।  অনেক অনেক ভালবাসা ও শুভেচ্ছা রইল ।
----------------------
.২৯শে এপ্রিল ২০১৫ ইং