রবির ঘরে শনি, আর শনির ঘরে রবি,
ছু কিৎ কিৎ খেলা খেলছে যেন রোজই।
অমঙ্গুলে মঙ্গল টা রাহুর গলা গলে,  
রাখবে তার নজর জানি চাঁদের গায়ে ঢোলে।
যথা ইচ্ছা তথায় যেতেও নয় যে রাজি বুধ,
বৃহস্পতিও উল্টো ঘুড়ে বাগড়া দিচ্ছে খুব।
শুক্রটাও মাঝেমধ্যে করছে হা-হুতাশ,
ঐ স্বরভানু রাহু-কেতুই করলো সর্বনাশ।


এমন কথা বলার পরে জ্যোতিষ দেখে ছক,  
মনের মাঝে কি জানি কি হয় নিত্য সে বকবক।
অনেক কিছু বুঝতে পেরে বাড়িয়ে ধরে হাত,
আতশকাঁচে খুঁটিয়ে দেখে করলো বাজিমাত।
চোখ ঘুড়িয়ে এদিক ওদিক দুষলো যেন কাকে,  
ভয়ে হাতের লোম খারা হয়ে লাফিয়ে ওঠে টাকে।
দেওয়াল থেকে দেব দেবীরা দিচ্ছিল বরাভয়,
তবু আমার মনের ব্রহ্মা যেন শুধুই কালীময়।


উলটে পালটে হাতের চেটো, ছকের কাগজখানা,
বললো যা মগজে তার ঢুকলো যে আধখানা।
সাতটা দিনের সাতটা বিধান দিলেন লিখে তিনি,
মানতে কোনও ভুলটি হলে খেলবে ছিনিমিনি
ভাগ্য আমার সাথে, তাতে হবে আমার ক্ষতি।
সেই ভয়েতেই মানলাম সব অগতিরই গতি।
বাইরে এসে মোড়ের বাঁকে খোলা আকাশ তলে,
ঐ গ্রহরাই তাকিয়ে দেখি মিটিমিটি জ্বলে।


এমন সময় হঠাৎ যেন দূরের আকাশ হতে,
পড়লো কি এক পায়ের কাছে দেখি অবাক চোখে।
আগুনরঙা পাথরকুচি উল্কি হাজারতরো,
হাত বাড়িয়ে তুলতে গিয়ে কাঁপছি থরোথরো,
হঠাৎ দেখি জ্যোতিষ সেথায় বললো উদয় হয়ে,
মূল্য দিয়ে করলে ধারণ বিঘ্ন যাবে বয়ে।
থাকব একটু চিন্তামুক্ত এমনি ছোট্ট আশায়,
খুশিমনে বুক চিতিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।


বহুকাল গেছে কেটে এই ঘটনার পর,
এখন কিন্তু বেড়ে গেছে আমার বাজার দর।
মস্ত টেবিল এপার ওপার যায় না মাপা হাতে,
দেওয়াল জোড়া কাঁচের জানলা চোখ লাগিয়ে তাতে,
আজও দেখি ঐ গ্রহরাই মিটিমিটিয়ে জ্বলে।
চাঁদের সমান লকেট এখন আমার গলায় ঝোলে।
অনেক পরে জেনেছিলাম রঙ্গীন পাথরখানা,  
তড়িৎবাবুর ছাদে রাখা বুদ্ধমূর্তি ভাঙা।


সে সব কথা পরলে মনে আজও হাসি পায়,
জ্যোতিষ বাবু আছেন কেমন জানতে যে মন চায়।
হয়তো তিনি ঠকিয়েছিলেন সেদিন পেটের দায়ে,
তবু পাথর ভাঙা বিশ্বাস আজও উড়ছে যে ডানায়।
সেদিন যখন ভাবিনি আর আজকে ভাবা কেন,
আমার যদি হয়েছে ভালো, ভালো তারও হয় যেন।
ভুল কি, আর কোনটা যে ঠিক কেউ তো জানে না,
তবু শক্তিহীনকে শক্তি দেয় যে, তার নয় সে ছলনা।