ময়ুরবাহন,
তুমি ভীষণ সুন্দর!
তোমার মাথার পাগড়িতে
যে ময়ূর রঙা পালক...  
তুমি তার থেকেও বেশী সুন্দর।
শুধু তোমার কালো পোশাকটা...
তাতে অনেক জমাট কালো রঙের লালও;  
যাক সে কথা আজ।


ওই ধুলো রঙের পাহাড়টাতে
প্রথম তোমায় দ্যাখা।
মাথার ওপর দাউ দাউ সূর্যে
জ্বলছো তুমি,
আর নাচছে আগুন
তোমার হাসির ঝিলিকে;
বন্‌ বন্‌ করে ঘুরছে তোমার তলোয়ার,
চিলের মত ছোঁ মেরে নেমে আসছে
পাহাড়ি বাঁকে, পাথুরে নদীটার পাথুরে ঘাটে...  


তবে তুমি দ্যাখোনি তাকে ময়ুরবাহন,
পাথুরে ঘাটে সেই কালো মেয়েটাকে!
বহু জমাট লাল তার কালো রঙেও...  
তোমার পোশাকের মত মহামূল্য!
ঝিলিক মারে তার আদুর গা
রোদ্দুরে, তুমি জ্বলো যেমন করে।


এই নিষিদ্ধ নগরীতে
সূর্যও ডুবে যায়,
তুমি তো মাত্র একটা মানুষ শুধু...  
ডুবন্ত সূর্যের আলোয় তোমার সাথে
ডুবতে চেয়েছিল সে,
সেও তো মানুষই তোমার মত;
চলে গিয়েছিলে তুমি
ধুলো উড়িয়ে ঘোড়ার ক্ষুরে ...
তোমার প্রতীক্ষায়
কালো চোখের চঞ্চল ছায়া ছেড়ে দিয়ে,
হাজার ঝাড়ের আলোয়
স্বর্ণকমল সিংহাসনের প্রতীক্ষাতে;
সেখানে ডোবেনা আলো,
আর তোমার বহুমূল্য হাসি ঝলমলে।


শুধু ডুবে যায় ভালোবাসা...
যেদিকেই চাও তুমি
বলয়রেখায়, পাথুরে ঘাটে;
অপেক্ষায় থাকে সে গাঢ় লাল রঙও,
সেই কালো মেয়েটার আদুর গায়ে।  
তোমার পাগড়িতে গাঁথা ময়ূর রঙা পালক,
পাহাড়ি নদীর বাঁকে বাঁকে নিষিদ্ধ আঁধার ছায়া হয়ে
ছোঁ মেরে, ধারালো গতিতে
খুবলে নিয়ে যায় চিলের মত...
তার নরম বুকের উষ্ণ প্রস্রবণ!


বন্দী হয় সে...
তোমার দুর্মূল্য কালো মহাবেশে
প্রাসাদের অন্দরে,
গুমরে মরে যাওয়া আলোর অন্ধকারে
তুমি সিংহাসন আর কস্তূরী ঘ্রাণেই
রইলে ডুবে ময়ুরবাহন...
যখন এ নিষিদ্ধ নগরে একদিন
সূর্য ডোবার পরে
প্রাসাদও গেলো ডুবে
জমাট লালের কালচে আঁধারে...
তুমি দিলে ছুট!
চিলের মতই ক্ষিপ্রতায়
তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে
আঁধারও দিলো ছুট... ছুট... ছুট...
বেঁচে গেলে তুমি
কাটা ছেঁড়া করেনি বিশেষ কেউ
বেঁচে গিয়েছ তুমি, দিয়েছ ছুট!


তবে আজ আমিও মুক্তো হব,
প্রহরীর পাহারা নিষিদ্ধ...
নিষিদ্ধ নগরীতে;
আজ সেই কালো মেয়েও হোক মুক্ত!
মুক্ত করে দিলাম আমি,
সেও দিক ছুট...
ধুলোমাখা পাহাড়টার চুড়োয়,
আরও ওপরে, তার থেকে আরও দূরে...
পাহাড়ি পাথুরে ঘাটের থেকে
ঘোড়ার ক্ষুরের ধুলোয় ভেসে,
জ্বলতে... জ্বলতে... রোদ্দুরে পুড়ে
তোমার ঝিলিক দেওয়া হাসির কাছে,
তোমার ময়ুররঙ্গা পালক ছুঁয়ে
তোমার মতই সেও সুন্দর হোক;
আজও সে চঞ্চল...
উষ্ণ প্রস্রবণ, মুক্ত হোক... ঝিন্দের বন্দী সে!