জনক চাহিলেন জানিতে রাজকার্য হেতু এমন সে জ্ঞান, যা রচিবে সে সেতু,
রাজা প্রজা মাঝে হবে যা অটুট বন্ধন; এমন রাজকর্মসুধা মুনি করুন মন্থন!
ভিক্ষা মাগে মিথিলা নরেশ অষ্টবক্র তরে, কহ গুরু দরবেশ বেশ পাব কোন বরে...
মুনি কহে মন দিয়া শুনহ রাজন, বুঝো তবে শান্তি আমি করি বর্ণন।
মোহজাল বুনে আর মুক্তি খোঁজা নয়, এমনই হইলে ত্যাগ আসিবে নিশ্চয়;
ধৈর্য, শ্রম,দয়া, তৃপ্তি সত্যের ঘর, ইন্দ্রিয়সুখ জেনো গরলের বর।
জেনো তুমি নহে সৃষ্টি আদি সেই পঞ্চভূত, মিলাইলে তাতেই পাবে জেনো পঞ্চসুখ,  
চেতনা বুঝিবে যেদিন তোমা হতে ভিন্ন, জানিবে মুক্তি তাহাই, মায়া হতে ছিন্ন!


প্রাণধারী, ক্ষত্রিয় বা ব্রাহ্মণ নও তুমি, জীব সাধ লভিবারে জিতিয়াছ ভূমি।
সাক্ষী হলেও জেনো তোমার নাই কোনো রূপ, সুখ নাই এইখানে জেনো গো অরূপ।
ঠিক বা বেঠিক সব এ মনেরই হাল, সুখ-দুঃখ, হাঁসি-কান্না, সবই মায়াজাল।
বন্ধনে রাজন জ্ঞানে পড়োনাকো ধরা, ভোগের কর্তা নও তুমি মুক্ত জলধারা...
অহং বোধে ভাবো অধীশ্বর তুমি, বাঁধা পড়ো নাগপাশে, আর হাসেন স্বামী।
শূন্য কলস যার শব্দ বিস্তর পারো যদি দেখো স্বরূপ হে নরবর...
তোমার কর্মের জেনো কর্তা তুমি নও, আদেশ কাহারে তুমি মানিবারে কও!
বোধে খুঁজো আপনারে রাজা নিরন্তর, অন্তরে বসেন যিনি তারে করো গড়।  


লভিলে সে আত্মজ্ঞান চেতনা কিরণে, আনন্দসাজে সাজো দুঃখের ভবনে;
রজ্জু ভেবে সর্প দংশনের ভীতি, নিজগুণে হে রাজন লও তাহা জিতি।  
মুক্ত আমি চিন্তা মাঝে মুক্তি তুমি পাবে, চিন্তা বাঁধতে দিলে তুমি বাঁধা পাবে।  
বাঁধা পরা, ছাড়া পাওয়া, মনেরই নজরে সুখ দুঃখ সবই রয় মনেরই গভীরে।  
শুক্তি বাসনাখোলশ ছাড়ি তুমি মুক্তা সম সাজায়েছো সংসার শুধু গহনা সম,
জেনো তুমিই শান্তি, বুদ্ধ, সুদ্ধ, ওম, চৈতন্যে আত্মা তোমার জানিবে পরম।
রেখো নিশ্চল আদি আর অদ্বৈত ধ্যানে, নাই দ্বৈতবোধ তুমিই অনাদি জ্ঞানে,  
যা কিছু ভিতর বাহির মিথ্যা সবই; অজন্মা সাজেই ছিলে, থাকবেও তুমি।


তুমি দেহঘরে বহুকাল ধরে ছিলে বদ্ধ, ভুলিয়া সে বাঁধন হও অপাপবিদ্ধ।
ছুরিসম জ্ঞান করে দেহবোধ কেটে, পরম নিবাস তরে যাও পথ হেঁটে,  
হইবে প্রদীপ শিখা তুমি নিজ পথে। সদামুক্ত হও সত্যে কর্মবোধ হতে
নিঃস্বার্থ হয়ে তুমি আদি অকৃত্রিম, নিশ্চল অরূপ সাজে হও বাধাবন্ধহীন।
মিথ্যা বলে জেনো তুমি সম্মুখে যা দেখো, জ্ঞানবলে সে সকল মায়া মনে রেখো...  
পরমেশ্বর দর্পণ সম প্রতিবিম্বে গড়া, তবুও সে ছায়া নয় দর্পণই ধরা!  
ছায়া মাঝে সেই ছবি যায় না তো ছোঁয়া, তবুও সে ছবি লোভে ছায়া সত্যকায়া।  
শূন্যে ভরা পাত্রের ভিতর ও বাহির, সেই রূপে ধড়াতে থাকিও হাজির।  


এতেক শুনিয়া রাজা বিস্ময় চিত্তে, বোঝে আঁখে বয় জল কোন সে নিমিত্তে...  
পূর্বে যা খুঁজিতো সে রাজ্য মাঝে, সাধু তারে দেয় সবই মনেরই সাজে।
সেদিন হতে রাজা সভার মাঝেতে সজ্জিত হইয়া ত্যাগ ব্রত সাজে,
রাজ্যতরে সব কিছু করিয়া লিখন, লাগিলেন করিতে প্রজার পালন।
গল্প হইলেও সে কথা জানিও সত্য, গৃহ মধ্যে রাখিও গীতা অষ্টবক্র,
নিশ্চল হইলে কভু জীবনের গতি, মুনির বাণীতে ফিরে পাবে জেনো মতি।
তার সে বাণীই জেনো জীবনের গান, পাইবে সে সুরে খুঁজি আনন্দধাম!
জীবনে খুঁজিতে সেই শান্তিসুরধাম অষ্টবক্র পদে ঢালি সীমন্তের দান।