গাঁয়ের অদূরে নিভৃত নীরবে আমার ভাঙা বাড়ি
মেঘনার কোল ঘেষে সুফসল ভরা ক্ষেতে
সেজেছে যেন এক নারী।
নাকে নলক, গাঁয়ে শাড়ি, হাত রাঙা লাল,
মিষ্টি হাসিতে ভরে যায় তার অপরূপ দু’গাল।
কৃষকের ঘরে জন্মে সহসাই বুক ফুলে হাটি
দিনশেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে ধানের বাঁধি আঁটি।


অবাক হয়ে সবাক চোখে ফেলফেলিয়ে দেখি
শান্তির পায়রা বেঁধেছে বাসা ভাঙা বাড়ি সে-কি?
দুষ্ট আঁখি গিঁট ফেলেছে সৃষ্টির অপার লীলায়
তাই বুঝি আজ স্রষ্টা স্বয়ং দিচ্ছে উঁকি শ্লীলায়।


উঠোন জুড়ে আঙ্গিনা ভরে মেলছে বধূ ধান
এই দেখে হয়ে মশগুল আমি তৃপ্তিতে প্রসার্যমাণ।


গাছ-গাছালি পাখ-পাখালী  সবই এক হয়ে একাকার
মধুর ধ্বনিতে দিচ্ছে ছড়িয়ে বাড়ির এপার তো ওপার।
গুনগুনিয়ে গাইছে গান, শনশনিয়ে বাতাস
ষড়ঋতুর দেশ যে মোর ছড়াচ্ছে এর সুবাস।


বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ আম কাঁঠালে ভাঙা বাড়ি ঘেরা
ঝড় তুফানে সব লেলিয়ে উপচে করে ছেঁড়া।
এতেও আমার দুঃখ থাকেনা, তবু সুখ্য দেয় না ধরা
স্রষ্টার আরোতীতে মগ্ন হয়ে জীবন গড়ি সেরা।


ভাঙা বাড়ি নেইকো চাঙা তবু প্রকৃতি থাকে মিত্র
আষাঢ়-শ্রাবণ বাদলা দিনে ভেসে উঠে তার চিত্র।
এই দিনে মাঝি মাল্লা, জেলে- ফেলে সবই ঘিরে রাখেনদী
আমিও তাদের দলে থাকি সুখ পাখি আসে যদি।


সিক্ত পরশে শেফালীর তারুণ্যে বেজে উঠে প্রাণ
এই বুঝি এল ভাদ্র-আশ্বিন গেয়ে যাই শরতের কলতান।
গগণে ভেসে যায় মেঘের ভেলা জলে শুভ্রহংস,
স্মৃতিপটে ভাঙা বাড়ি গড়ে তোলে নতুন বিংশ।


ধানের গন্ধে আসে নাকো ঘুম নবান্ন উৎসবে
কার্তিক-অগ্রহায়ণে ধান কাটা চলে হেমন্ত প্রভাবে।
পিঠাপুলির নিমন্ত্রণ চলে বাংলার ঘরে ঘরে
শান্ত সৌম্য ঋতু ভিড় করেছে আমার ভাঙা নীড়ে।


পৌষ আর মাঘের কনকনে শীত মিশেছে নিমেষে
প্রমত্ত ধরণীর শীতল ছোঁয়ায়ে প্রকৃতি নুয়েপড়েআবেশে।
ঠান্ডা হাওয়ায়ে ভাঙা বাড়ির চারপাশ কাঁপছে নীরবে
যেন কুয়াশার চাদরে শিশির ভেজা ঘাসে আশ পাশ ছঁড়াবে।


কোকিলের কুহুতান দক্ষিণের হাওয়ায় সৃষ্টি হয় বসন্ত
আম্রকুলের গন্ধ ফুলের সমারোহে উঠে যৌবনের বাড়ন্ত।
ঋতুরাজ বসন্ত ধরা দেয় এই ফাল্গুন চৈত্রতে
বারমাস ধরে ভাঙা বাড়ি জুড়ে প্রকৃতি ছড়ায় নানা বৈচিত্র্যতে।