এককালে এই খোয়াই নদী ছিল ফুলে ফেপে,
শ্রাবণ মাসে তার যেন হাটু জলে থাকে
নদী পারাপারের জন্য ছিল একটি সুউচ্চ সেতু
এটা ছাড়া আমাদের অন্য উপায় ছিল নাকো ।
নদীটি ছিল খুব দীর্ঘ, বয়ে যেত পাহাড়ের বুক চিরে
এটাকে নিয়ে নিত্যনতুন কোলাহল জাগত সবার মন ঘিরে,
মান্ধাতার আমল থেকে শুরু করে নদীটি যেন টিকেছিল আপন গৌরবে,
বয়ে যেত দুটি দেশের মধ্য দিয়ে নিজস্ব সৌরভে।
এটি ছিল স্বল্প গভীর, মাঝখানে দেখা যেত বালুর চর
কতগুলি উপনদী এসে মিলে যেত একমন ।
নদীটি ছিল খরস্রোতা যেন আকা বাকা
সময়ের স্রোতে পরাজিত হয় এটিকে লাগছে এখন নিঃস্ব ফাকা।
নদীটি ছিল জঙ্গলে ঘেরা যেন প্রকৃতির নারী,
পাহাড় থেকে বয়ে নিয়ে যেত চিকন চিকন বালি।
নদীটি ছিল মানুষের আশ্রয়স্থল, ছিল আপন গতি,
মানবসভ্যতার চাপের ফলে এটির যেন হয়ে দাড়িয়েছে এখন দুর্গতি।
এটির জল নিয়ে কৃষকেরা চাষত নিত্য আপন জমি
এটির ছিল আপন গৌরব যেন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিমনি ।
অসংখ্য বাধা পেরিয়ে এটি বয়ে যেত পরদেশে,
দুই দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে শেষ পর্যন্ত এটি নতুন জগতে মিশে
নদীটির ছিল আপন অহংকার যেন গল্পকথা
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে করেছিল নতুন চিরগাথা ।
জঙ্গলে ঘেরা সঙ্কীর্ণ পথ, ভেসে থাকত কচি কচি ডালি
সমস্ত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে নদীটির বক্ষে জমা হয়েছে চওরা চওরা বালি।
তীব্র স্রোতে নৌকাগুলি বয়ে যেত দূর দেশে ভেসে
মাঝি যেন বৈঠা চালাত আপন মনে হেসে ।
দৈর্ঘ, প্রস্থ সব মিলিয়ে নদীটি যেন তার পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে,
জনগনের ভালোবাসার চাপে খোয়াই নদী যেন আপন কীর্তি হারিয়ে।


বর্তমানে খোয়াই নদী হয়ে গেছে বন্ধ্যা নারীর গর্ভ,
দেখতে লাগে একে যেন চর্মহীণ বর্ম
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তার আপন জাদুর ছন্দ
নিস্ব জলহীন একাকায় খোয়াই নদীকে লাগে যেন মন্দ ।
যে সপ্নের ভার নিয়ে খোয়াই নদী বয়ে চলেছিল এতদিন
অস্ত্রহীন পরাজিত রাজার মত তার বন্ধ্যাত্য বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন ।
কোথায় চলে গেছে তার হারানো গৌরব যা বয়েছিলো এতদিন ধরে,
জনগনের চাহিদা মেটাতে মেটাতে তুমি পরে গেলে যেন কোন গহ্বরে
একটা প্রশ্ন সর্বদা থেকে যায়, তুমি কি ফিরে পাবে তোমার হারানো গৌরব ?
অতীতের স্মৃতির পুনরাবৃত্তি করতে গেলে তোমাকে হতে হবে চরম ।