আজ হরতাল,
আমি যে কালো পিচ ডালা রাজপথের উপর হেঁটে চলছি,
একটু আগে এই রাজপথ দিয়ে মিছিল নিয়ে গেল
কিছু নবীন, কিছু প্রবীণ
হাতে ফেস্টুন, প্লে কার্ড, ব্যানার।
পিছনে লাইন ধরে স্লোগান দিচ্ছে কিছু ঠোকাই,
তারা অনেকে জানেনা, কিসের হরতাল? কিসের দাবী?
কার প্রতি দাবী?
তবে এইটুকু নিশ্চিত,
মিছিল শেষ হলে হাতে কিছু টাকা আসবে,
আর না হয় জুটবে কিছু খাবার।
রেল লাইনের পাশে ছালা মাছা দিয়ে তৈরি ছন্ন প্রাসাদে
একটু বাতাসে যেথা উড়ে যায়,
ছোট্ট বোনটি আছে অপেক্ষায়,
কারো অসুস্থ মা, কিংবা বাবা অপেক্ষা করে
কখন আসবে? কখন খাবার হবে?
ক্ষুধার্ত এই মানুষগুলোর কথা কেউ কি কখনো ভেবেছে?
তাদের জীবন পালটানোর জন্য কোন হরতাল কি আজ?
সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী পরা নেতা, পাতি নেতারা সামনে এগিয়ে,
পিছনে কর্মীরা তাদের পাহারা দেয়,
জনতার দাবী হলে তাদের এত কিসের ভয়?
এই পিচ ডালা পথ যুগ যুগ ধরে শুধু ইতিহাস হয়ে রয়,
কারো পাওয়ার ইতিহাস,
কারো না পাওয়ার ইতিহাস,
কারো হাহাকার, কারো চিৎকার,
কারো হাসির, কারো কান্নার, কারো হারানোর ইতিহাস।
এইখানে কেউ মিছিল নিয়ে যায়,
কেউ মহা সমাবেশ করে,
কেউ অবস্থান ধর্মঘট করে,
কেউ করে আমরন অনশন,
কেউ উর্দি পড়ে গুলি চালায়,
কেউ রামদা হাতে পশু হয়,
কেউ মরে, কেউ শহীদ হয়,
কেউ গাড়ির তলায় পিষ্ট হয়ে জীবন দেয়।
আর তাদের পায়ের তলায় পিষ্ট এই রাজপথের জীবন যুগ যুগ ধরে।
কেউ ক্ষমতা পুষবে, কেউ ক্ষমতার জন্য লড়বে,
কেউ কি তারা জনতার জন্য লড়বে?
পিচ ডালা রাজপথের তা জানা নেই।
তারপরও সে যুগ যুগ ধরে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে চলে
কিছু লোভী, কিছু সংগ্রামী, কিছু পরাজিত, কিছু বিজয়ী মানুষকে।
যারা তাদের
অসভ্যতার কালি মুছতে, কিংবা ইতিহাস মুছতে
বার বার আলকাতরা দিয়ে লেপন করে তার শরীর।
সৎ, ক্ষুধার্ত, নিপীড়িত মানুষের সংখ্যা এইখানে একদম কম।
কারণ তারা বুঝে না রাজনীতি কি।