"আততায়ী"


(আজ জলপাইগুড়ি কাজে গিয়েছিলাম খাদি ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রি বোর্ডে-জলপাইগুড়ির অফিসে। সেখানকার ডিস্ট্রিক্ট অফিসার মিঃ সত্যকাম গুরুং যিনি জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার, তিনটি ডিস্ট্রিক্ট এর চার্জে রয়েছেন তার চেম্বারে তার সাথে অনেকক্ষণ সময় কেটে যায়। তিনি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু স্থানীয়। কথায় কথায় পরিযায়ী শ্রমিক দের কথা ওঠলে তিনি আমায় প্রশ্ন করন, "আচ্ছা সঞ্জয় বলতো এই যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরে আসছে এরা যাত্রা কোথা থেকে শুরু করেছিল?" উত্তর অত্যন্ত সোজা, আমি বলি, বম্বে হরিয়ানা কেরল দিল্লি রাজস্থান ইত্যাদি জায়গা থেকে। তিনি বলেন , "না এরা যাত্রা শুরু করেছিল এখান থেকেই আর এদের পরিযায়ী হবার জন্য আমরাই দায়ী। সরকারি অনেক প্রকল্প বেকার বা গরিবদের সহায়তা করবার জন্য রয়েছে অথচ ব্যাঙ্ক তো এদের পাত্তাই দেয় না আর যে অন্য যে সকল প্রকল্প রয়েছে সেগুলি পেতে গেলে এরা মাসের পর মাস ঘুরতে থাকে, বছর পেরিয়ে যায় অথচ ভ্রষ্টাচারী সরকারি অফিসারেরা এদের হয়রান করতে থাকে, তো এদের তো কাজের জন্য, পেটের টানে পরিযায়ী হতেই হবে"। আমি সরকারি আমলাদের ভ্রষ্টাচারের শিকড় বিশেষ একটি ক্ষেত্রে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছি বিভিন্ন ভাবে, সে অন্য গল্প। সেজন্যই হয়তো বা এসব আমাকে বলা। তারপর তিনি রিকোয়েস্ট করলেন আমাকে এ ব্যাপার নিয়ে একটি কবিতা লিখবার জন্য। আমি তাকে কথা দেই আজ ফিরে চেম্বারে বসে প্রথমেই এই লেখাটি লিখবো আর এরপর যে দিন এখানে আসবো বাংলা আর ইংরেজি দুটো ভার্সনেই তাকে পাঠ করে শোনাব। ঘন্টা খানেক হলো ফিরেছি। খাওয়া দাওয়ার পর লেখাটি লিখেই ফেললাম আর যেহেতু এখানেই সরাসরি লিখছি তাই সম্পাদনা না করেই প্রকাশ দিলাম কারণ লাইট চলে গেলে সবই পন্ডশ্রম হবে)


দেশে কাজ নাই তাই পরদেশে পরিযায়ী
খুন হলো গুম হলো বলো কে সে আততায়ী।
দেশে কাজ নাই তাই পরদেশে পরিযায়ী
পথে পথে প্রাণ গেল বলো কে সে
আততায়ী!


দেশ এক ভারতীর সন্তান তারা ছিল
রুজি রুটি সন্ধানে দূর তারা গিয়েছিল।
গতরেতে খাটে তারা কল আর কারখানা
করোনার আগমনে ভারি হলো
কারনামা।


পরদেশে বিতারিত হলো তারা ঘর হতে
কর্ম ও শ্রম গেল চলে এলো ফুটপাতে।
কেউ নাই সাথে পাঁচে প্যাচালো সে গল্পটা
পায়ে হেঁটে পরিযায়ী দুখ ভারি
ঘনঘটা।


পথে পথে প্রাণ যায় ক্ষুদা নাই নিরসনে
অবসাদ ক্লান্তি সে মৃত্যুর ধরা গানে।
কহিতে কি পারো কি গো আততায়ী কোন জনা?
সরকারি অফিসেতে হয়েছিল
জাল বোনা।


গরিবের নাই ধন আমানত ব্যবসার
ব্যাঙ্কের দ্বার নাই মাথা ঠুকা ঠুকি সার।
সরকারি অনুদান কত রং বাহারে
প্রকল্প কত শত গরিবের
আহা রে!


আশা নিয়ে কত শত; ছোটে সবে অফিসেতে
বুকে শেল বিঁধে শেষে বাবুদের ঘোটালাতে।
দিন মাস বছরটা ঘুরে ঘুরে একাকার
পরিবার চলে নাকো স্বপ্ন সে
ভেঙে হার।


শেষমেশ গতি হারা দূর দেশে চলে তারা
পরদেশে পরিযায়ী হয় তারা গৃহ হারা।
দেশে কাজ নাই তাই পরদেশে পরিযায়ী
খুন হলো গুম হলো বলো কে সে
আততায়ী!


দেশে কাজ নাই তাই পরদেশে পরিযায়ী
পথে পথে প্রাণ গেল বলো কে সে
আততায়ী!


(সংযোজনা আর বি।দ্রঃ তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন যারা এমন পরিযায়ী শ্রমিক এমন যারা কাজ হারিয়ে চলে এসেছে তেমন লোক পেলে তাদের কিছু ব্যবসার প্রোজেক্ট রিপোর্ট বানিয়ে তাদের তার কাছে পেশ করবার জন্য এবং কথা দিয়েছেন তিনি স্পেশাল কেয়ার নিয়ে তাদের লোন গুলি পাস করে দেবেন যাতে সেই টাকাতে তারা কিছু করে এখানেই বেঁচেবর্তে থাকতে পারে। অবশ্যই তাদের জন্য আমার কাজও বিনে পয়সাতেই হবে)