ভারসাম্য
কবিঃ শ্রী গৌতম রায়


জীবনটা তো দুই চাকার সাইকেল
উঁচু-নিচু বাঁকা পথে; চলতে হয় বুঝে
জল কাদা রাস্তায়, কোন উপায় নেই ফিরে আসা
চলতে হবে সম্মুখে, জীবনের ভারসাম্য রেখে
দীর্ঘ পথ হয়ত কঠিন, নেই কোন সাথী
কখনো আধার কখনো আলো, এটাই বাস্তব উপলব্ধি
জীবনের গতি, যেদিন যাবে থেমে
তোমার কর্মের সার্থক ফল, পাবে ভবিষ্যতে।


একদম সহজ সরল লেখা কিন্তু তার তাৎপর্য অপরিসীম। কবি জীবনকে দু-চাকার সাইকেলের সাথে তুলনা করেছেন। মানুষের ও তো দু'টা পা, প্রয়োজনে চলে প্রয়োজন না হলে চলে না বা চলতে চায় না যেমন কেবল প্রয়োজনের সময়ই সাইকেল ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমন ই। মেঠো পথ উঁচু-নিচু চলতে হয় বুঝে সুজে। এখানে লক্ষণীয় যে কবি মেঠো পথে জল কাদায় ভরা উঁচু নিচু আঁকা বাঁকা উল্লেখ করেছেন। এর নিহিত অর্থ হল জীবনটা তেলতেলা মসৃণ পথ নয় বরঞ্চ রুক্ষতা বঞ্জরতা এপথে অনেক বেশি, একে পরিবার পরিজন, আয়ের সঙ্কুলান, রোগ ভোগ, চাহিদার অপূর্ণতা আর রাগ রোগ ক্রোধ, ঘৃণা হতাশা, মিত্রতা শত্রুতা সহযোগে বন্ধুর এ পথ চলা। তাই কবি বলেছে্ন জীবনের পথ চলতে হবে ভারসাম্য রেখে আর কবিতাটির নামকরণ ও তাই রেখেছেন,"ভারসাম্য"। কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণভাবে সার্থক।


দীর্ঘ পথ হয়তো কঠিন, নেই কোন সাথী, কবি এখানে কঠিন সময় কালের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, সুখের সময় হাসি উল্লাসে সখি সাথী , আত্মীয় স্বজন , বন্ধু বান্ধব পরিবেষ্টিত থাকা যায় কিন্তু দুঃখ যখন ঘিরে ধরে একে একে তারা সকলেই দূরে চলে যায়। এটাই বাস্তব সত্য কথা। এ সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক ভারসাম্যে অতিক্রম করতে পারলেই জীবন সার্থক হয়ে থাকে।


পরিশেষে তিনি বলেছেন, জীবনের গতি, যেদিন যাবে থেমে তোমার কর্মের সার্থক ফল, পাবে ভবিষ্যতে। এটি একটি মাহাত্মপূর্ণ উক্তি। ধন ধনী থেকে শুরু করে দরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে কবি সাহিত্যিক সকলেরই সঠিক মূল্যায়ন হয় জীবন গতি হারানো বা মারা যাবার পর।


ধনী তার ধনের গড়িমায় সমাজে অত্যন্ত উঁচু আসনে আসীন থাকলেও, সবাই তাকে স্বার্থের কারণে মান্য গণ্য করলেও, তাকে সমীহ সম্ভ্রম করলেও তার মৃত্যুর পর তার সমালোচনা করতে দ্বিধা করে না। তার অমানুষিকতা, চৌর্যবৃত্তি আর শঠতার চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় সেদিন।
গরিব লোক দরিদ্রতা সহযোগে সৎ ভাবে জীবন অতিবাহিত করলে মারা যাবার পর তার গুণগান মানুষ করে থাকে।
আবার যদি কবি জীবনানন্দের কথা ভাবেন বলুন তো জীবদ্দশায় কতটুকু মান্যতা তিনি পেয়েছিলেন!!


কাজেই এ দিনের কথা চিন্তা করে নিজেকে সংশোধন করুন, পরিমার্জিত করুন, সৎ ও সত্যের পূজারী হোন। দুর্বিনীত দুরাচারী মানুষকে সমাজ কখনোই মনে রাখে না, মৃত্যুর পর ধিক্কার দেয় তাকে। আপনার কর্মই আপনার ভবিষ্যৎ।


ভারি সুন্দর অর্থবহ কবিতা উপহার দেবার জন্য প্রিয় কবিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।