“আমার জীবনে প্রথম রম খাওয়া”


জ্যাততুত দাদার বিয়ে, বাবা তাকে নিজের পয়সায়
পড়াশুনা করিয়েছিলেন, প্রতি মাসে মা'য়ের সাথেই
দাদার নামেও মানি ওর্ডার আসতো।
বাবা তখন পোস্টিং ছিলেন সিকিম 'রেনকে',
বাবার সাথে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।
তখন তো মোবাইল ছিল না, চিঠিই ভরসা।
ঠিক হ'লো পল্টুদা বাবাকে আনতে যাবেন,
সাথে গেলাম ডাকাবুকা আমি। আলগারা
অবধি বাসে পৌছে গেলাম, সেখান থেকে
হরতাল, বাস বন্ধ।
দুপ্রহর, পল্টুদা বলে, ভাই চল ফিরে যাই আর
আমি একে তাকে জিজ্ঞাসা করতে থাকি, যাওয়ার
কোনও বুদ্ধি আছে কি'না?
একজন জানায়, চোরাবাটো সে জানুস,
চোরাবাটো মানে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ।
আমি পল্টুদাকে উৎসাহিত করি, জানি না কী মনে করে
পল্টুদাও রাজি হয়ে যায়।
আর তারপর! চোরাবাটো ধরে হাঁটা শুরু, ।
পাহার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কষ্টসাধ্য, প্রায় ট্রেকিং এর মতো।
সে পথে কোনও নেপালি লোক চোখে পরলেই তাকে জিজ্ঞাসা-
দাজু, এ বাটো রেনক পুকছ! উত্তর, পুকছ।
একটা মিলিটারি গাড়ি যাচ্ছিল সেটা ধরতে গিয়ে,
চোরাবাটো দিয়ে যেই উপর রাস্তায় উঠি ঠিক মু্হুর্তের ব্যাবধানে
তা পার হয়ে যায়।
যাই হোক এভাবে চলতে চলতে 'পেডং'।
সেখান থেকে আবার চোরাবাটো।
ধীরে ধীরে আলো কমে আসছে, রাত নেমে আসে।  
প্রায় রাত আট টার সময় লাফ দিয়ে যে চাঁতালে উঠলাম,
রেনক নয় এক্কেবারে রেনক মিলিটারি স্টেশান
মানে বাবার এলাকা।
বাবা তার মিলিটারি বাংলোয় নিয়ে গেলেন।
তারপর সব শুনলেন। হটাৎ আর এক ঘর থেকে
দু'টো গ্লাসে পানীয় নিয়ে এলেন আর বললেন-
এটা খেয়ে নাও।
এক চুমুক খেয়ে এত বাজে লাগলো বাবাকে বললাম,
এটা আমি খেতে পারবো না, বয়স তখন পনের কী ষোল।
বাবা বল্লেন একঢোকে খেয়ে নিতে, তাই করলাম।
বাবা চলে গেলে পল্টুদা আমায় বলে, ভাই দেখতো
ফ্রীজে আরও আছে না'কি? আমি অবশ্য একটু পরেই
বমি করতে করতে বেহুশ হয়ে গিয়েছিলাম।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে।
আজ বুঝতে পারি, কেন বাবা সেদিন
রম খাইয়েছিলেন।
লিখছি আর চোখের জল কপোল বেয়ে যাচ্ছে।
আজ আর বাবা ইহকালে নেই, এরকম অসাধ্য কাজ
করে দিলে-রম খাওয়ানোর জন্যে।
বাবা যেখানেই থাকো,
ভাল থেক।


“মর্মব্যথা”


সময় সে তো কাল-মহাকাল ধাম নিগুঢ়
তত্ত্ব কথা, যুগান্তরের ঘূর্ণিত পাঁক
দারুন মর্মব্যথা।
তাহারি বেণীতে ধূম্রকায়েতে অযুতো নিযুত গ্রহ,
নীহারিকা দল চূর্ণিত দলে-আরোহন
অবরোহ।
তাহারি জটায় সৃষ্টি সৃজন অলকোদামেতে যোনি,
যুগ যুগ কাল প্রলয় লয়েতে-রাজ্য কী
রাজধানী।
অজ্ঞান হেতু রণেতে মাতিছে মূরখ কুরুর দল,
পান্ডব কী পাঞ্চালী মাতে-ধ্বংসের
নীশাদল।
পঞ্চভূতেতে বিলীন কালেতে না রহে শিরস্ত্রাণ,
মহাকাল ধাম ধাবিতেছে পিছে;
বলিতেছে যেন সজলো সঘনো
করো হে প্রস্থান।
হিংসা দ্বেষ রণ আঁকরি কী হবে রে ধরা,
কাল সে স্রোতে যায় যে ভেসে
তনু কায় মনো-
হরা।


“হীন”


পাপিষ্ট জনেতে দীন দুনিয়া আঁধার ঘোরতর,
অন্ধ সে জন বিম্বিত রুধির
ভ্রান্ত দ্বেষের
দ্বার।
ক্লান্ত মাতা মহীয়সি রূপ কালের কালিতে লীন,
পাপাচারী জন হরিতে হরিত
দাবদাহে চাহে
হীন।
কুপিত গরলে কাঁদিছে ধরণী অবনীর অবসাদ,
গৃদ্ধ রুহেতে দ্বারেতে গাহিতে
রসনাতে ধরে
সাধ।
আঁধিতে বাঁধিতে শ্রীহীন কবচো কুন্ডলি সম,
বেণীতে আঁকরি মহাকাল ধাম
মর্মরে প্রাণ
সম।
সমতা বিহীনো সামাজিক বায় রুধিত শ্বাসেতে বাঢ়,
যুগে যুগে কাল সংগঠিত
নিঠুরিত মান
তার।
আজিকে পাষাণ বেদিতে পরান-হিংসার প্রতিরোধ,
আগুন সে দল গড়িতে ত্বরায়
কর্মকারের
বোধ।
সেদিন বহিবে কপোত নিশান শান্তির সুধা বারি,
রচিতে তাহারি রূপ রেখা রঙ
গাঁথাতে হৃদয়
ভরি।