আজ কবিতার ছন্দ নিয়ে আলোচনা করি। ছন্দ বা লহর বা প্রবাহ। একটি পুকুরে ঢিল মারলে জল তরঙ্গাকারে উঁচু নীচু হয়ে আন্দোলিত হতে হতে বিস্তার লাভ করতে থাকে। তাতে থাকে সুলালিত্যের ছোঁয়া। দেখতে ভাল লাগে। জলতরঙ্গের ধ্বনি তেও সেই একই মূর্ছনা। গানও ওই একই ভাবে বিস্তার নেয়। এগুলিকেই আমারা ছন্দ বলে ধরে নিতে পারি। যা পর্যায়ক্রমে ঊঁচু নীচু ভাব বিস্তারে অপরূপ ভাবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। দেখতে বা শুনতে তা সুমধুর হয়। কাকের ডাক কর্কশ কেন জানেন তা কানে বা হৃদয়ে সুমধুর লাগে না বলে। সেখানে কোকিলের কুহু কূজনে মোহাবিষ্ট হয় মন হৃদয় কারণ তা শ্রুতিমধুর হয়ে থাকে।


কাজেই আমরা সাহিত্যে সবসময় চেষ্টা করে থাকি আমাদের লেখাগুলি যেন শ্রুতিমধুর হয়ে থাকে আর উঁচু নীচু লয়ে সে লেখা তরঙ্গাকারে লিখতে চেষ্টা করে থাকি। সেটাকেই আমি ছন্দ বলে মেনে থাকি।


এবার সে প্রসঙ্গে আসি ছন্দ কী ভাবে রপ্ত করা যায়। ছন্দ রপ্ত করবার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো বিভিন্ন কবির ছান্দিক প্রকাশ একটু জোরে জোরে ছান্দিক ভাবে পাঠ করা। এ প্রয়াস চালিয়ে যেতে লাগে অনবরত। নিজে লেখবার সময় ও লেখাটি লিখতে লিখতে জোরে জোরে পাঠ করে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগে সে লেখা। তাহলেই কোথায় ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে বা শ্রুতিমধুর হচ্ছে বা হচ্ছে না তা সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়। কবিতায় যা লিখব তা অবশ্যই শ্রুতিমধুর হতে হবে।


উদা্হরণ স্বরুপ আমি বললাম। "দিন বিফলে গেলো বিফলতা আমি পেতে চাই না। তার জন্য যত দূরেই আমাকে যেতে হোক না কেন, আমি হাল ছাড়ব না", একথাটাই যদি ছান্দিক ভাবে আমি বলতে বা লিখতে চাই তো এভাবে লিখবঃ


হোক না সে দিবস বিফল
বিফলতা নাহি চাহি,
দিশা সে সুদূর হোক না স্বরূপ
কভু সে রাহা, ছাড়িতে
নারি।


ছোট বেলা থেকেই আমি খুব জোরে জোরে ছান্দিক ভাবে কবিতা পাঠ করতাম। এখনো কারো লেখা পাঠ করলে শব্দ করে ছান্দিক ভাবে পাঠ করতে চেষ্টা করে থাকি। ছন্দ তৈরি হয় হৃদয় মন মননে।


এরকম করতে করতে একসময় রপ্ত হয়ে যায় ছন্দ।


বিশেষ বিশেষ কিছু লেখা ছাড়া আমি লেখবার সময় হৃদয়ের ছন্দকেই অনুসরণ করে থাকি আর চেষ্টা করি সে লেখা তরঙ্গাকারে লিখতে তা যেন শ্রুতিমধুর হয়ে থাকে। আমি বারবার পাঠ করতে থাকি লেখবার সময়। এটা ভাবি, লেখাটি যদি আমার কাছেই শ্রুতিমধুর না হয় তো অন্যের কাছে কী ভাবে হবে।


যাই হোক, কবিতা লিখতে গিয়ে যে সকল অনুভূতি আমার হয়েছে তাই শেয়ার করতে চেষ্ট করলাম।


নিবেদনে আপনাদের প্রিয় সঞ্জয় কর্মকার।


সংযোজন :


হোক না সে দিবস বিফল
বিফলতা নাহি চাহি,
দিশা সে সুদূর হোক না স্বরূপ
মানবতা গান
গাহি।
দূর্গম পথে পাড়ি দিতে হতে
নাহিকো রাহীতে হীন,
দিবসেতে কীবা রজনীতে
সুরভিতে নাহি
দীন।
দয়ালো প্রভুতে মজেছি ভবেতে
প্রভাতে দেখেছি আলো,
দিকে দিকে রব হিংসা ও দ্বেষে
পেয়েছি অনেক
কালো।
করালো ছায়েতে আদুল গায়েতে
মেখেছি কালির ভূষি,
কাঁদি নাই, কাঁদি নাই রব
কোমর বেঁধেছি
কশি।
আজিকে প্রভাতে তোমাতে দেখেছি
তমাতে ঘনাতে রাতি,
বিদ্বেষ বীণ ছড়াতে ধরাতে
কলঙ্ক প্রতি-
ভাতি।
মর্মরে প্রাণ লহু স্রোত বান
নাফের নদীতে লীন,
অসহায় জন হারিয়ে স্বজন
অশ্রুতে হরা
বীণ।
বীণার সে তার বেঁধেছি সোপান
আজিকে দ্রোহেতে মাতি,
রাহা সে সুদূর হোক না স্বরূপ
শাণিত কৃপাণ
মতি।
হোক না সে দিবশ বিফল
বিফলতা নাহি চাহি,
দিশা সে সুদূর হোক না স্বরূপ
মানবতা গান
গাহি।


(লেখাটি রাত ২।৪৫ মিঃ এ সম্পন্ন করলাম। শুভকামনা।