আগের আলোচনাতে বলেছিলাম, কবিতা কিছুটা রূপকের সাহায্য নিয়ে লিখতে হয়। এবার চলে আসি সে প্রসঙ্গে রূপকের ব্যাবহার কী ভাবে কবিতায় করবো। সোজা কথায় তুলনা। অন্য কিছু ঘটনার আড়ালে সত্য প্রকাশ করবার চেষ্টা। ব্যাপারটা সহজ করবার জন্যে একটি রূপকের সাহায্য নিয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করি, যেমন যদি বলি,


"কলি শত ফুটে হ্রদে সরোবরে পান্না
দলিতের কোকোনদে, বয়ে চলে
কান্না।
দিবা রাতি বাজে সুর আকাশের হাতছানি
কেড়ে নিতে কমলেতে, লুট মার রাহা-
জানি।"


(এখানে লক্ষ্য করুন কমল বা পদ্মফুলের ইতিহাস লেখা অথচ লেখাটি কিন্তু  দলিত বা গরিব লোকের ঘরের সুন্দরী তনয়াদের করুণ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে কান্না বয়ে চলে মানে দুঃখ। "দিবা রাতি বাজে সুর আকাশের হাতছানি", দালাল চক্র এখানে কাজ করে, ভালো কাজের মুনাফার প্রলভন দেখিয়ে ছলে বলে কৌশলে তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে দেশে বা বিদেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়)


১৯/০৪ এর সংযোজনঃ লেখাটি্র সম্পূর্ণ রূপ দিলামঃ-


কলি শত ফুটে হ্রদে সরোবরে পান্না
দলিতের কোকোনদে, বয়ে চলে
কান্না।
দিবা রাতি বাজে সুর আকাশের হাতছানি
কেড়ে নিতে কমলেতে, লুট মার রাহা-
জানি।"
কলি তায় বোঝে নায় ভন্ড কী মেকি ওরা
স্বপ্নের দেশে মন, করে তারি ঘোরা
ফেরা।
লাবন্যে ভরপুর দলে দলে দোলা তোলে
পালকিতে দিশা তারি, দরিয়াতে পাল
মেলে।
সরোবরে দ্যুতি খেলে হীরকের দেশে রাজ
হীনতার পরিশেষে, মুকুরেতে পেতে
সাজ।
পরিণয়ে মিলে কী গো ক্রুরতার রোশনাই
নির্ঝরে ঝরে চলে কমলে সে
বাসনাই।
বিকিকিনি হাটে চলে শতদলে দরাদরি
আমি কবি লিখি আজি, বিষাদেতে হৃদ
মেলি।


বিঃদ্রঃ লক্ষ্য করবেন যে পুরো কবিতাটি রূপকে লেখা হয়েছে। লক্ষ্য করুন, "সরোবরে দ্যুতি খেলে হীরকের দেশে রাজ/ হীনতার পরিশেষে, মুকুরেতে পেতে সাজ" (সরোবর বলতে এখানে পরিবার পিতা মাতার কথা বলা হয়েছে। তাদের যখন লোভ দেখানো হয়েছে তাদের মেয়েকে তারা ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি বা অন্য কোথাও কাজে লাগাবে ও সে অনেক টাকা কামাতে পারবে তখন সে গরিব পিতামাতা এটাই ভেবেছিল যে হয়তো তাদের দুঃখের দিন শেষ হবে, এরপর থেকে তারাও সুখে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে সমাজে আর কলি মানে তনয়া সে তো, "লাবন্যে ভরপুর দলে দলে দোলা তোলে/ পালকিতে দিশা তারি, দরিয়াতে পাল মেলে", সে তো তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। শেষে, "পরিণয়ে মিলে কী গো ক্রুরতার রোশনাই/ নির্ঝরে ঝরে চলে কমলে সে বাসনাই", (তারপর তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তার সে সব কামনা বাসনা কান্নায় পরিনত হয় আর, "বিকিকিনি হাটে চলে শতদলে দরাদরি", মানে সে বিক্রি হয়ে যায় কোনও পতিতালয়ে।)


(কাকের ঘরে কোকিল ডিম পেড়ে যায়, কাক বুঝতে না পেরে সে ডিমে ওম দিয়ে বাচ্চা ফুটায়। কাকের ধ্বনিতে সে বুঝতে পারে , সে বাচ্চা তার নয়, এ রূপকের সাহায্যেও বর্তমানের মানব জীবনের ছবি আঁকা যায়। বাবা মা কত কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করে, মানে ওম দেয় আর বাচ্চা বড় হলে বিনিময়ে কী পাচ্ছে তারা আজকাল। কোকিল বানাতে চেয়েছিল, বোল ফোটার পর দেখা গেল কাক), তো চলুন লিখে ফেলি।


কোকিলের  কুহু কুহু কাক ডাকে কা কা
জীবনটা সোজা নহে বড় আঁকা-
বাঁকা।
নারায়ণী সনাতনী ভাবনাতে মন মেতে
সবে চায় সিঁধে সাধা সুখ ধারা রাহা
পেতে।
ডিমে তা দিতে চলে সোনা মনা পেতে ভবে
শেষ মেষ ডিম ফোটে-হাহাকারে কা কা
রবে।
পাখিটাই গতি হারা জরা কাল করে তাড়া
কা কা বোলে ছেলে পুলে করে তারে ঘর
ছাড়া।
বৌমুনি সোনামুনি দম্ভ  কী মান তার
হাপড়েতে ফাঁসে ফেলে কেড়ে নেয় জান
তার।
জনে জনে ঘরে ঘরে কেলোর ওই কীর্তি
হিস হিসে শ্বাস দোরে, দানবের
মূর্তি।


আশা করি কবিতায় রূপক কী ভাবে ব্যাবহার করা যায় বোঝাতে পারলাম।


হার্দিক শুভকামনা সহ সঞ্জয় কর্মকার।