Sanjay Karmakar
ospe6h 51shrah9g7259u8m80  ·


মেঘলা দিনে, বাদল গানে, মাতলো আমার মন,
উঠলো তুমুল, ঝড়ের শুরু, কালবোশেখির সন, কালবোশেখির সন।
বৃক্ষ তার ওই, শাখায় শাখায়, কালবোশেখির ঝড়ে,
দোদ্যুল দোলে, বৃক্ষপতি , কালবোশেখির রণ। কালবোশেখির রণ।


বৃক্ষপতি, পাতার বাহার, রাজায় রাজায় খেলা,
যেমন জনের, সমাগমে, গমগমে হয় মেলা, গমগমে হয় মেলা।
চরণ চুমে, ভূমির প'রে, বৃক্ষ তার ঐ শাখ,
প্রবল তার ওই, শাখায় শাখায়, কালবোশেখির হাঁক। কালবোশেখির হাঁক।


ছুটিয়ে ঘোড়া, ভীষ্ম যেমন, দারুন সে তার পণ,
বৃক্ষপতি, রাজ সে তাহার, করতে সমাপন,  করতে সমাপন।
রাজায় রাজায়, যুদ্ধ চলে, গরিব যে জন অতি,
ভাঙছে আতুর, মাটির গৃহ, হচ্ছে দারুন ক্ষতি। হচ্ছে দারুন ক্ষতি।


চলছে সে রণ, দেখছে কবি, কে জেতে, কে হারে,
মাল্য সে তার, জয়ের মুকুট, কার গলে আজ পরে, কার গলে আজ পড়ে।
বৃক্ষপতি, ক্ষিতির পরে, উপড়ে তার ঐ মূল,
বিজিত আজি, তার সেনানী, কী ছিল তার তূল! কী ছিল তার ভুল।


মাল্য তাহার, সুঘ্রাণ হারায়, পায় না তারে দিতে,
উদাস কবি, খসলো সে ফুল, বর্ণ হলো ফিকে। বর্ণ হলো ফিকে।
করুণ করে, দুহাত জোড়ে, নতয় সে তার শির,
হারলো কবির, আজ সে স্থবির, রুদ্ধ কারার বীর। রুদ্ধ কারার বীর।


লেখাটির সারমর্ম অল্প কিছু কথায়ঃ-


প্রিয় কবি বটগাছকে গাছের রাজা আর কালবৈশাখী কে প্রাকৃতিক বিপর্ষয় এর রাজা হিসাবে এখানে কল্পনা করা হয়েছে। এদের দুজনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। কালবৈশাখী তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বৃক্ষরাজের উপর আর বৃক্ষরাজ ইউক্রেনের মত তার কাছে হার মানতে রাজি নয়। শাখা তার লুটিয়ে পড়ছে ভূমিতে আবার সে সোজা হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাজায় রাজায় এ যুদ্ধে গরিব মানুষের বাড়ি ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে পড়ছে। কবি আগ্রহভরে উপভোগ করে সে অসম যুদ্ধ দেখে যাচ্ছে। তার হাতে মালা। বিজয়ীর গলায় কবি মালাটি পড়িয়ে দেবেন। একসময় বৃক্ষরাজ ধরাশায়ী হলো আর মূলসমেত উপড়ে পরে গেল। হিসাব অনুযায়ী কালবৈশাখীর গলায় কবির মালাটি পড়িয়ে দেবার কথা থাকলেও সে পারলো না তা করতে। তার মন ভেঙে গেছে, মুখ বিবর্ণ হয়ে পড়েছে, হাত থেকে তার মালা পড়ে গিয়েছে, কারণ কবি মনে প্রাণে চাইছিলেন যে বৃক্ষরাজের যেন কোন ক্ষতি কালবৈশাখী করতে না পারে। যে কালবৈশাখী গরিব লোকের ঘর ভাঙে দিয়েছে , তছনছ করে তান্ডব মাতিয়ে এত ক্ষতিসাধন করেছে তার গলায় কবি কী করে মালা পড়াতে পারে? কবি তার মাহাত্ম্য হরিয়ে ফেললো আর তাতে তার মাথা হেট হয়ে গেলেও, তার সম্ভ্রম নষ্ট হলেও সে পারলো না কালবৈশাখীর গলায় বিজয়ীর মালা পড়াতে। কবি যেন রুদ্ধ কারার বীরের মত হতে হলো আজ। বীর রুদ্ধ কারায় থাকলে যেমন যুদ্ধ করতে অক্ষম হয় তেমনিই কবি মানবিক অনুশাসনের বন্ধনে আবদ্ধ আর তাই যে গরিব মানুষের ক্ষতিসাধন করেছে তার গলায় সে মালা দিতে পারলো না অনুশাসনের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার কারণে আর এ কারণেই কবিতাটির নামকরণ রুদ্ধ কারার বীর করা হয়েছে।