ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখে….
কি যেন নাম, প্রায়:ক্ষন বসে থাকে মহানন্দার তীরে
হ্যাঁ-হ্যাঁ ছেলেটি তো অমুকের ছেলে,বলল পাশে আরেক নিন্দুক
বলুন তো দেখি কবিতা লিখে কি হবে,
কবিতা ভাত দিবে?
অর্থের যোগান দিবে?
দেবদাস হয়ে বেঁচে থাকার কোন মানে আছে?
নিশ্চয়ই না,খামাকা নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া।


দেখুন না মাথায় ঝাকরা কুকরানো চুল,
যেন কাজী নজরুল নয়তোবা যৌবনে রবিঠাকুর
মুখ ভর্তি দাঁড়ি কাঁধে ঝুলানো পাটের চটের ব্যাগ,
কি ভাবই না তার, দেখেছেন?
হ্যাঁ,এত খামখেয়ালির কোন মানে নেই,
কি করতে পারবে কবিতা লিখে?
পারবে বিয়ে করে বৌকে তিনবেলা ঠিকমত খাওয়াতে?
পারবে বৌয়ের চাহিদা মিটাতে?
এমন সন্নাসীর ঘরে কে দিবে ভাল মেয়ে বিয়ে?


দিবে, অবশ্যই দিবে,আমার মেয়েটাকেই ওই ছেলেটার কাছে বিয়ে দিব, বলতে বলতে আসলেন এক ভদ্রলোক।
কি বললেন মসাই?
হ্যাঁ দিব, কেন দিব জানেন ,দিব এই কারণে?
কোন কারণে মসাই ?
আমার মেয়েটিও এই সংস্কৃতির, মানে গীতিকার।
গীতিকার! তার মানে সেও কবি?
কবিতা ছাড়া গীতি বা সংগীত হয় নাকি? বললেন নিন্দুক।
আচ্ছা গান শুনেন কেন, বলতে পারেন?
আরে গান তো মনের খোরাক!
একাকিত্বের সূর সঙ্গী।
গান প্রাণের আনন্দ সঞ্চার করে।
কেন বলুন তো, সংগীত ভাললাগে গীতিকারকে ভাললাগেনা কেন?
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’
মধুর সূরে জাতীয় সংগীত গাইতে পারেন, আবার কবিকে নিন্দা করেন?
ওই ছেলেটি তো আর রবিঠাকুর না ? নিন্দুকের প্রশ্ন।
কেন কবি কি আলাদা হয় না কি?
রবি ঠাকুর কাজী নজরুল জীবনান্দের জগত কি আলাদা ছিল?
নিরুত্তুপ!মুখ শুকিয়ে পাংশু হয়ে গেছে নিন্দুকের।


জানেন কবি কেন কবিতা লিখে? ভদ্রলোক আবার বলতে শুরু করলেন-
ওই যে ছেলেটা কবিতা লিখে,যার নিন্দায় এতক্ষণ মশগুল ছিলেন
সে বেড়ে উঠেছে নানা প্রতিকূলতার ঝড়ের মধ্য দিয়ে,
নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে,
জীবনের অভাব কি সে নিজের চোখের দেখেছে আর সয়েছে,
আপনার মত সাধারণ মানুষ এরা নয়!
তাহলে কি মহাপুরুষ জাতীয় কোন মানুষ! নিন্দুক প্রশ্নটা ছুড়ে ফেলে।
হ্যা মহা পুরুষ! এরা সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকে পৃথিবীতে,
যুগযুগ ধরে
এই দেখুন না ইতিহাসের পাতায় আদি কবি হেরোডোটাস এর নামটি,
এরকম বহু মনিষী আছে যারা কবিতা লিখত!
তারা আজ বেঁচে আছে ইতিহাসের পাতায়,
সোনার কলমের কালিতে খোদাই করা কত ভাস্কর্য,
এরা তো মরেও জীবিত, তাদের অমৃত সৃষ্টি আমরা লালন করি,
শিক্ষা অর্জন করি, আমাদের প্রজন্মদের শিক্ষা দেই,
যদি কবিতা ভাল না লাগে তাহলে দেশের শিক্ষামন্ত্রীকে বলে দিন-
জাতীয় কোন পাঠ্যপুস্তকে যেন একটি কবিতাও না থাকে, পারবেন?
নিশ্চুপ। কোন কথা নেই নিন্দুকের মুখে,শুধু চোখে এক হতাশার দৃষ্টি।


ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখছে,
বেরঙ নদীর তীরে বসে;
ওই যে দেখা যায় শিশু গাছ;
এখানে প্রায় প্রায় ছুটে আসে পাগল ছেলেটি
এখানে বেরঙ আর গবরা দু-নদীর মিলনে
এক স্বপ্নীল মোহনা সৃষ্টি হয়েছে।
ওই যে দেখুন না নদীর ধারেই পূর্ব প্রান্তে
ভারতের সবুজ বিছানার মত বিস্তৃত চা-বাগান
এটা দেখতে চলে আসে মাঝে মাঝে ছেলেটি
সূর্য ঢোবার ঠিক ঘন্টাখানিক আগে আগে;
এই শিশু গাছটির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে,
বাম হাতে রাখা প্যাড নোটে কি সব কবিতা খসরা করে,
আর কি যে একটা যন্ত্র টিপাটিপি করে;
ওই ড্রাফট করা কবিতাগুলো গচাগচ টাইপ করে।
ও মনে পড়েছে শুনেছি যন্ত্রটি ল্যাপটপ কম্পিউটার,
ছবি দেখা দেখা যায় ছবি তোলা যায়,
কি অদ্ভূত যন্ত্র রে বাবা!
কথাগুলো বলে যাচ্ছিল তৃতীয় সারির নিন্দুক ফটিক চান মৌল্লা
তবে ততটা নিন্দুক মনের মানুষ নয় সে;
আচ্ছা ছেলেটি কি একেবারেই কাজকর্ম করে না;
নাকি সারাদিন ঘুরে ফিরে আর কবিতা লিখে?
না-না ছেলেটি এমনি ভীষণ স্বভাবের সুন্দর;
তবে চাকুরীর ক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকার;
কিন্তু মাস শেষে ইনকামও করে বেশ,
রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করে; কলম চালালেই টাকা আর টাকা..
কিন্তু কবিতা লিখে কি বাড়িঘর বিল্ডিং দিতে পারবে?
বেঁচে থাকা কবিদের ক’জন মূল্যায়ন করে বলুন?


কেন মরার পর খ্যাতিটা পেলে অসুবিধাটা কোথায়?
অবশ্যই অসুবিধা আছে মশাই;
জীবিতকালে খ্যাতি না পেলে মৃত্যুর পর পেলে;
এই সৃষ্টিশীলতার সার্থকতা কোথায়!
কেন ভুলে যাচ্ছেন ভাই?
কি মশাই?
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে’
মানে?
কেন এর ফলটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মরা ভোগ করতে পারবে;
এটা কি আপনি চান না?
আরে ভাই কবি তো নিজের জন্য লিখে না;
লিখে দেশ-জাতির সকল বিশ্বের জন্য;
তো দাওয়াত নেন ভাই।
কিসের মশাই?
আমার মেয়ে চন্দ্রমল্লিকার বিয়ে?
কার সাথে বিয়ে দিচ্ছেন মশাই?
কেন ওই ছেলেটির সাথে! ওই যে ছেলেটি কবিতা লিখে—
কি বলছেন, আপনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রশান্ত বাবু!
তাতে কি, আপনার কি কোন সমস্যা আছে?
না, মানে-বলছিলাম—–
বুঝতে পেরেছি আপনার ঘরেও;
আমার মেয়ে চন্দ্রমল্লিকার মত একটি মেয়ে আছে!
হ্যাঁ—কিন্তু আপনি হিন্দু হয়ে….
প্রয়োজন হলে মেয়ের জন্য আমিও মুসলমান হয়ে যাব।
আমি চলছি ভাই—
আরে কোথায় যাচ্ছেন বাবু প্রশান্ত;
নদী মহানন্দায় ওই ছেলেটির কাছে———
ভদ্রলোক চলছে নদী মহানন্দার দিকে…….
আরে দাঁড়ান মসাই—জোরে জোরে ডাকতে থাকে নিন্দুক….