‘প্রিয় বন্ধুর গল্প’,              


গাইবান্ধা সরকারী কলেজে অনার্স ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস শুরু হওয়ার তিন মাস পর্যন্ত একদিনের জন্য কলেজে যেতে পারিনি। নানা রকমের ব্যস্ততার মাঝে দিন কেঁটে যায়। আজ যাবো, কাল যাবো বলে যাওয়াই হয়না।  তিন মাস পর যে দিন প্রথম কলেজে যাই আমার বিভাগের সহপাঠীরা কেউ আমাকে চিনে না। চিনবে কিভাবে আমিতো ভর্তির পরে কলেজে আসিনি। ওরা (সহপাঠিরা) জিজ্ঞাসা করলো কার সাথে এসেছো। বললাম আমি এই কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র। এতদিন কলেজে আসনি কেন ? আমি একটু মিথ্যা বললাম, ঢাকায় ছিলাম তাই আসতে পারিনি। তারপর ওদের কয়েক জনের নিকট থেকে ফোন নাম্বার সংগ্রহ করি এই বলে যে, কলেজে কখন কি হয় জানার জন্য। সপ্তাহ খানেক পর ওদের একজন (রাহুল) এর নিকট ফোন দিয়ে শুনি ক’দিন পর আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে পিকনিক এর আয়োজন করা হয়েছে এবং সবাই কে সেখানে অংশগ্রহন করার জন্য বলা হয়েছে। ভেবে দেখলাম কলেজে ঠিক মতো যেতে পারিনা তবে পিকনিক এ যদি না যাই তাহলে সবাই এর কাছে আমি অপরিচিত থেকে যাবো। তারপর পিকনিক এর ফি বাবদ সকল টাকা জমা দিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম যে, আমি সত্যি সত্যি পিকনিক এ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। আর মাথায় একটা ভিন্ন চিন্তা করতে লাগলাম যে, এমন কি কাজ  করা যায় যাতে সবাই আমাকে চিনতে পারে। অনেক চিন্তার পর সে রকম কোন পথ খুঁজে না পেয়ে ভাবলাম যে, বাসে একটু হলেও ক্লান্তি লাগে। সেই ক্লান্ত অবস্থায় যদি টক জাতীয় কিছু একটা থাকতো তাহলে ভালই হতো। তাছাড়া মেয়েরা তো টক এর স্বাদ পেলে পরকেও আপন করে নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেড় কেজি তেঁতুল এর আচার কলেজ ব্যাগে ভরিয়ে পিকনিকে অংশগ্রহন করার নিমিত্তে বাস এ উঠলাম। সে দিন ছিল ১১মাঘ, ১৪১৬ বাংলা। ২৪শে জানুয়ারী ২০১০ ইং মোতাবেক রবি বার। সকাল ৬টা ১৫মিনিটে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বাসের মাধ্যেমে যাত্রা শুরু হলো। বাস চলছে কান্তজির মন্দির ও সিংড়ার ফরেষ্ট এর দিকে। ঘন্টা দু’য়েক পর ভ্রমনে যখন সবাই ক্লান্ত তন্দ্রাভাব চলে এসেছে ঠিক তখনি আমি আমার ব্যাগ থেকে আচার বের করে খাওয়া শুরু করলাম। আমার পার্শ্বে একটা মেয়ে ছিল। সে আমার আচার খাওয়া দেখে অনেক ইত:স্তত করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল আমাকে একটু দেয়া যাবে কি? তারপর ওকে দিয়ে বললাম তোমার নাম কি? বলল সিনথিয়া। সে ও আমার নাম জেনে নিল। অন্যান্য মেয়েরা তার আচার খাওয়া দেখে বলল কি খাচ্ছিস সে বলল তেঁতুলের আচার। তখন সবাই বলল কোথায় পেলি। তখন আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল এই বন্ধুর নিকট থেকে পেয়েছি। যেই বলা সেই কাজ সকল মেয়েরাই আমার নিকট চলে আসলো  বলল প্লিজ আমাকে একটু দিন না আমাকে একটু দিন না। কাকে ছেড়ে কাকে দেই বলে পুরো ব্যাগটা দিয়ে দিলাম যে, এখানে প্রচুর আচার আছে তাই তাড়াহুড়ো করার কোন অবকাশ নেই। যার যতটুকু প্রয়োজন নিয়ে না্ও। তারপর আচারের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করল। ছেলে বন্ধুরা বুঝতেই পারছেনা এখানে কি হচ্ছে? আমি জানি এরকম একটা কিছু হবে তাই আগ থেকেই একটু আচার আলাদা করে রেখেছিলাম নিজে খাওয়ার জন্য। কিন্তু পাশ্বের মেয়ে সিনথিয়া ওদের সাথে পাড়াপাড়ি না করে চুঁপটি মেড়ে বসে আছে। ওকে দেখে একটু মনটা খারাপ হলো তাই আমার লুকিয়ে রাখা আচার টুকু ওকে দিয়ে বললাম নাও খেয়ে নাও। এভাবেই কখন যে, আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থান কান্তজির মন্দির এ পৌঁছিয়েছি টেরেই পাই নি। সে (সিনথিয়া) ছাড়া সকল মেয়েরাই আমার নাম জিজ্ঞাসা করল যে, তোমার নাম কি? কলেজে নিয়মিত আসো না কেন?, তোমার আচার খুবই ভাল হয়েছে বলে সবাই আমাকে ধন্যবাদ দিতে লাগল। কিন্তু সিনথিয়া আমার দিকে বার বার তাকিয়ে থাকেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে না আপনার দিকে তাকাইনি তো। পুরো পিকনিক সময়টা ও আমার সাথে সাথে থাকে আর জিজ্ঞাসা করে নানা রকমের প্রশ্ন ? আমিও উত্তর দেই আনন্দের সাথে। ফেরার পথে ও আবার আমার পার্শ্বেই বসল। একটু পর পর বলে তুমি খুব উদাস তোমার মতো উদাস ছেলে আমাদের বিভাগে একটিও নেই। তার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে, বাস এসে কলেজ ক্যাম্পাসে  দাঁড়িয়েছে তা নিজেও জানি না। নামার পথে ও আমাকে বলল তোমাকে ভাল লাগে। আমি বললাম কেন? ও বলে জানি না-


****************************
এস,এম জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ)
পরিচালক
তরঙ্গ সাহিত্য সংসদ (তসাস)
সাঘাটা,
সাঘাটা, গাইবান্ধা।
মোবাইল নং- ০১৯২০-৩৭০৫৩৮