যখন স্বর্ণ মুদ্রা পৌঁছাল
তখন তোমার কাফন জড়ানো দেহ
ছুটে চলছে মহাকালের পথে।
হে অভিমানী কবি
কতটুকু অভিমান, কতটুকু কষ্ট নিয়ে
তুমি চলে গেলে
সেই আহত পাখীর মত;
যারে তার মালিক ভালোবেসে
ছুঁড়ে ফেলেছে বিণা কারণে!


তুস নগরী
আলো ঝলমলে ফুলের বাগান
বয়ে যায় নদী কল কল স্রোতধারায়
কবি আনমনে বসি
লিখে চলেছেন কবিতা কাব্য অনলে জ্বলি।
রাজার ক্রোধে কবি জীর্ণবেশে গজনীর পথ ধরি
চলেছেন ভাগ্যান্বেষনে অদৃষ্টের পানে ছুটি।


কে দেবে আশ্রয়?  কে দেবে কবির স্বীকৃতি?
বড় অসহায় আজ এ দীনহীন কবি।


গজনীর রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন উদ্যান
বসে আছেন তিন সভা কবি
সেখানেই জীর্ণ বেশে
দাঁড়ালেন কবি আবুল কাশেম!


বিরক্ত সভাকবির দল
তুমি কে হে বাপু?
আমিও এক কবি
ক- বি! কবির এমন ছিড়ি!


তো কেমন কবি তুমি?
হয়ে যাক পরীক্ষা
দেখি কেমন তোমার দীক্ষা
বেশ!  তবে তাই হোক।


আমরা তিন কবি বলব তিন চরণ
পরের চরণ মিলাবে তুমি
যদি না পার, হেথা থেক না অকারণ।


চন্দ্রাধিক জোর্তিময় তোমার বদন
এত মনোরম নয় গোলাপ কানন
চোখের ভ্রুদ্বয় করে বর্মের ভেদন


থামলেন কবির দল
বল এবার পরের চরণ
বেশ, বলছি শোন-


এ যেন গেঁওর অস্ত্র,  সমর পুশন।


চমৎকার! চমৎকার! হে আগন্তুক কবি
তুমি দেখি সত্যি ই এক কবি।
জীর্ণ কবি শুধায়,যদি পাই রাজার দেখা
তবে তারে শোনাতাম কাব্য গাঁথা।
হিংসুক কবির দল- রাজার দেখা
সে তুমি পাবে না, চলে যাও এ বেলা।


ভগ্নহৃদয় কবি
কতদিন গেছে চলি
গজনীর পথ ধরি।


যারে স্রস্টা দেয় দু হাত ভরে
তারে হায় কে ফেরাতে পারে!
একদা মন্ত্রী মোহেক, পান কবির দেখা
কবি তাকে শোনায় সোহরাব রুস্তমের অমীয় গাঁথা।


মুগ্ধ মন্ত্রী মোহেক
কবির হাত ধরি
চলে যায় রাজপ্রাসাদ
গজনীর শাসক সেথা সুলতান মাহমুদ।


কবি শোনালেন প্রাণভরে কতনা কাব্য গাঁথা
মুগ্ধ সুলতান ডাকে তারে আয় ফেরদৌস
আলো করে দাও এ সভা স্বর্গের সুধায়।
তারপর সুলতানের - কত রাত গেছে কাটি
কবি আবুল কাশেম ফেরদৌসের কাব্য শোনি।


সুলতান মাহমুদ বলেন শোন ফেরদৌস
রচনা কর এক মহাকাব্য শাহনামা
প্রতি শ্লোকের বিনিময়ে পাবে স্বর্ণমুদ্রা
জানি এতেও হবে না তোমার কাব্যের দাম।


লেখা হয় ইরান তুরানের এক সুবিশাল মহাকাব্য
দীর্ঘ ত্রিশ বছর কত বিনিদ্র রজনী ধরি।
ষাট হাজার শ্লোকের জন্য এবার কবি
পাবেন ষাট হাজার স্বর্ণ মুদ্রার এক থলি।


হায় হিংসুকের দল- তোমাদের কু মন্ত্রে
সোনার বদলে কবি পেলেন রূপার থলি।
এ যে কবির অপমান,  এ যে কাব্যের অপমান
কবি ঘৃণা ভরে করে তা প্রত্যাখ্যান।


রুষ্ট সুলতান মাহমুদ
হাতিতে পিষে মিশিয়ে দাও ওর গর্দান
ক্রোধ থেমে গেলে সুলতানের
এতদিনের বন্ধু কে দেয় নির্বাসন দন্ড।


কবি চলেছেন ভগ্ন মনোরথে
কি জ্বালা অন্তরে তার কাব্যের অপমানে
মাহমুদকে অপমান করে লিখে গেলেন চিঠি
তাই দেখে সুলতানের ক্রোধ বাড়ে ঠিকি।


সুলতান তখন বাগদাদের সভাকবি
লিখে চলেছেন ইউসুফ জুলেখা কাব্য খানি
মাহমুদ শাস্তির মানসে খলিফার কাছে যায় ছুটি
খলিফা অবজ্ঞা ভরে- মাহমুদ কে লিখে আলিফ লাম মিম!


কি এর অর্থ? আলিফ, লাম, মিম
হায় যদি আজ থাকত ফেরদৌস
তবে এর অর্থ সে করে দিত নিমেষে
কিন্তু হতভাগা, করছে অপমান সুলতানে।


অনেক বছর পরে-
তুস নগরীতে ফিরেছে ফেরদৌস
বিগত দিনের স্মৃতি শুধু মনে পড়ে
সুলতানের অপমান তাড়ায় তাঁরে বারে বারে!


এতদিনে সুলতান- বুঝেছে সবি ছিল ভুল
হিংসুকদের প্ররোচনায় সে বন্ধুরে ফুটিয়েছে হুল।
না না সে করবে এর প্রতিকার
ষাট হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে বন্ধুরে ফিরাবে এবার।


চলেছে সুলতানের দূত
মহা সমভিব্যাহারে
যখন পৌঁছলেন হায়- পৌঁছাতে হয়েছে দেরী
সকল মায়া ছিন্ন করে কবি, দিয়েছে পরপারে পাড়ি!