কবি জসিমউদদীন এর কবর কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত
২০১৪ সালের লেখা।


দাদু আমার  কথা শোন যাসনে চলে ওরে
মনের যত ব্যথা আছে বলব আজ তোরে।
বুড়োর সাথে করে আড়ি লাভ কি হবে বল
জীবনটাতো গেলই কেটে করে মিছে ছল।
মনের দুঃখ মনে থাকে বাইরে হাসি মূখ
দুঃখ ভরা এ জীবনে এটাই ভীষন সুখ।
মিথ্যা সুখের মালা গেঁথে জীবন হল শেষ
এখন ভাবি এটাই ঠিক এই করেছি বেশ।
থাকিস না আর অভিমানে এই যে গাছের ছায়
আয় বসে কথা কহি মাদুর বিছায়।
আজ কেন জানি ক্ষণে ক্ষণে বড় ভয় হয়
কবর দেশ বুঝি বেশি দূর নয়।
তাইতোরে দাদু আজ মনটা ব্যাকুল
কিছু কথা শোনাতে  হয়েছি আকুল ।


দাদু  কান পেতে দেখ এই মাটির তলে
তোর বাবা ঘুমায় রয়েছে কেমন করে
নিরব অভিমানে দেখ কেমন ঘুমায়
যে তোরে দিত ভরিয়ে হাজার চুমায়।
দাদু বলতো দেখি পৃথিবীতে কি সবচেয়ে ভারী
পিতার কাধেঁ তার সন্তানের লাশখানি।
তোর বাবা ছিল খুব হাসি খুশি
সারা গায় ছিলনা তার কোন  জুড়ি।
অল্প বয়সে তার দিয়ে দিলাম  বিয়ে
কত অভিমান তার ছিল এটা নিয়ে।
এভাইে  দিন যাচ্ছিল বেশ চলে
এর মাঝেই তোর আগমন ভীষন কোলাহলে।
দাদু হাসছিস, শোন তোকে পেয়ে
চাঁদের আলো আসলো যেন রামধনু বেয়ে।
ঘরেতে যে থাকত মোটে ক্ষণকাল
এখন যেন তোকে নিয়েই সকাল-বিকাল।
ছেলে আমার বড় হবে তোর মাকে বলত সে কথা
হবে মানুষের মত মানুষ এক রবে ইতিহাসে গাঁথা
যখন আমি থাকবনা চলে যাব খোকা
তুই কি তখন বসে বসে কাঁদবিরে বোকা
তুই কি ওসব বুঝতিস হাসতি থোকা থোকা
তা দেখে  ডেকে যেত বনের পাপিয়া।
কোন এক কাক ডাকা ভোরে কি জানি অসুখে
বাবা তোর পড়ল বিছানায় দাঁড়াল না ওঠে
কত পথ্য শেষ হল, থামল না তো অসুখ
সকল ব্যাথা ভুলত সে দেখে তোর মূখ
কাছে ডেকে  বলত তোকে বাবারে
কীযে ব্যাথা রল মোর মন মাঝারে
বড় সাধ ছিল  তোকে বড় করে
সুখের মরন মরে যাব কবরে
মাফ করে দিস বাবা তা হল না আর
সময় যে হয়ে এলো আমার যাবার
হঠাৎ কি যেন খিচুনিতে
প্রাণটা তার বেরিয়ে গেল ভীষন চীৎকারে
দাদু ধর ধর আর নাহি পারি
কান্না যে আসে মোর এ বুক ফাঁড়ি
আয় দাদু ধীরে ধীরে কবরের গায়
যেথায় তোর বাপ ঘুমায় বড় নিরালায়
দোয়া কর  হাত তোলে প্রভুর পানে
মোর বাবাকে রেখ খোদা তোমার জান্নাতে।
এইখানে চেয়ে দেখ কবরের বায়
তোর ছোট বোন দেখ কি করে  ঘুমায়
তোর বাপ যখন ছিল মরনের ঘাটে
এই হতভাগিনী তখন মায়ের পেটে
দুঃখ মাখা মুখটি নিয়ে যে আসল এপারে
চাঁদ যেন লজ্জা পেয়ে ডুবত তারি রূপে
বয়স খুব বেশি নয় বড় জোর তিন
চঞ্চলা হাওয়া হয়ে নাচত তা ধিন
কোথা মোর বাবা দাদু বলত হেসে
দেখ চেয়ে বাবা তোর তারার দেশে
দাদু ঐ যে বড় তারাটা, সেকি মোর বাবা
বাবা আসো আসো দূরেতে তুমি থেকোনা
তুমি যদি থাকো বসে তারার দেশে
দোষ কি আছে বলো আমায় নিতে
দাদু চোখের জল মুছে ফেলে দেখ রে চেয়ে
কেমনে ঘুমায়ে বোন এই কবরে
আধাঁরকে বাসিত না মোটে সে ভালো
সেই আঁধারেই চিরতরে সেযে ঘুমালো
কত যে বাসত ভালো তোরে সে দাদু
ভাইয়া হলো আমার চোখের যাদু
কোন এক সন্ধ্যারাতে সে যে গেল হায়
সেই দুঃখে শিউলীরা যায় ঝরে যায়
বাতাসের  সুরে দাদু কান পেতে শোন
কে যেন রে ডেকে যায় বড় সুকরুণ
চোখ মুছে কাবলিওয়ালা ফিরে ফিরে চায়
সে বুঝি ডাকবে এখন এই ভাবনায়
সে আর ডাকবেনা দাদু আয় দোয়া করি
খোদা মোর বোনেরে সুখ দিও দু হাত ভরি


এই খানে চেয়ে দেখ তোর দুঃখি মায়
জীবনের অংক ফেলে কেমনে ঘুমায়
কত দুঃখ বয়ে ছিল এই হতভাগী
সে ব্যথায় পাখি ডাকে মাঝ রাতে জাগি
গরীব ঘরের মেয়ে পায়নিতো সুখ
ভুলেছিল  সব  ব্যাথা দেখে তোদের মূখ
স্বামীরে হারায়ে সে যে কি ভাবিত সদা
জানার সাধ্য কি মোর জানিত বিধাতা
তোরা দুটি ভাইবোন  ছিলি তার মণি
বড় ব্যকুল হত তোরা যখন আড়াল হতি
দেখ দাদু পকুরে খেজুরের ঘাটখানি
তোর মায়ে ভেজাতো তার দু পা খানি
হয়ত নিরব দূপুরে একলা পুকুরে
তোর মায় কাদিঁত চাপা কষ্টে
সেই দুখে দাদু ওরে ঝরে যেত পাতা
দেখ দাদু ঐ ঘাটে বাজে আজো ব্যাথা
তোর  পানে চেয়ে কি ভাবিত সে যে
ভাবনার আড়ালে অশ্রু ঝরত চোখে
হয়ত সে জেনেছিল তার ঠিকানা
তাই বুঝি কবরের গায় কইত কথা
মা আমার লক্ষী অতি বড় দুখে দুখি
তাই বুঝি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেল পাখি
দাদু  আয়রে দোয়া করি চোখের জল মুছে
আমার মাকে খোদা রেখ জান্নাতে।