অশ্বত্থের ডালে সবাই ঝুলে থাকতে দেখেছে পরাণকে
আর আমি দেখেছি একটা বিদ্ধস্ত হৃদয়,
মন থাকলে যদি মানুষ হয়
তাহলে মানুষ ‍হিসাবে পরাণ খারাপ ছিল না।
পরাণ’রা আমাদের গ্রামে বিত্তবানদের একজন,
সদ্য ডিগ্রী পাশ দিয়েছিল,
তবে বিয়ে করেছিল আগেই।
একদিন পরাণকে নিয়ে বেশ মজা হয়েছিল-
প্রত্যেকদিন সে খেলার মাঠে যেত
কিন্তু খেলত না।
কারন, সে গতিময় বল দেখলে খুব ভয় পায়,
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ভীতুদের মধ্যে একজন ছিল সে।
একদিন আমরা খুব বলাতে সে খেলতে রাজি হল,
তবে গোলরক্ষক হিসাবে।
মজার ব্যাপার হল-
যখনই বল আসতে দেখত
তখনই গোলপোস্ট থেকে সরে দাঁড়াত।।


সেই পরাণ!
অবাক সবাই,
খুব সাহস!
কিন্তু আমি জানি
আবারো সে প্রমান করল
দুনিয়ার আর সব ভীতুদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ।
নইলে কী আর বউ এর সাথে ঝগড়া করে
কেউ আত্নহনন করে।
রেল লাইনের পাশে,
অশ্বত্থের নিচে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ
বাহবা দিচ্ছিল পরাণকে
আবার কেউবা করছিল আফসোস।
কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল
কারন-
সবাই দেখেছে ঝুলে থাকতে পরাণকে
কেউ দেখেনি তার বিদ্ধস্ততা।।


পরাণ কখনো কারো সাথে ঝগড়া করত না
তবে জেদী ছিল খুব বেশি,
একবার যদি ঘরের বউ তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছে
তবে ঘরের সব চূরচূর করে ভাঙেছে।
তাই বিয়ে করানো হয়েছিল আগেই।
পরাণের বউ নাকি খুব সুন্দরী,
শুনেছি পরাণের বউ একটুও কাঁদেনি
তবে বার দু’-এক নাকি অজ্ঞান হয়েছিল।।


সবাই ঝুলে থাকতে দেখেছে পরাণকে
কেউ বুঝেনি পরাণের পরাজয়ের কষ্ট।
স্কুলে পরাণ আমাদের সিনিয়র ছিল।
একবার এক মেয়ে পরাণকে প্রেম নিবেদন করাতে
স্কুলের দেয়ালে মেরে মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছিল।
সেই পরাণ!
আজো হারেনি প্রেমের কাছে।।


বাড়িতে এসে যখন একে একে পরাণের কথা মনে হচ্ছিল
তখন থেকে থেকে জল গড়াচ্ছিল আমার চোখ থেকে।


কেউ কেউ বাহবা দিচ্ছিল পরাণকে-
খুব সাহস!
কিন্তু আমি জানি
আবারো সে প্রমান করল
দুনিয়ার আর সব ভীতুদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ।
নইলে কী আর বউ এর সাথে ঝগড়া করে
কেউ আত্নহনন করে।
সবাই ঝুলে থাকতে দেখেছে পরাণকে
কেউ দেখেনি তার বিদ্ধস্ত হৃদয়
কেউ বুঝেনি পরাণের কষ্ট।।


      রচনাকালঃ ২৯ জুলাই, ২০০২খ্রিঃ।