স্বাধীনতার পতাকা যখন উড়ছে
পাগলটা রাস্তার ধারে বসেছিল।
নেতারা এলো, অনেক মানুষজন
অনেক বক্তৃতা দিলো,
দেওয়ার শেষ হলে মাস্ক লাগিয়ে
সকলে চলে গেলো ক্লাবে।
পাগলটাকে কেউ কিছু দিলো না।
আগে যখন লাল ছিলো,
তখন কিছু খাবার জুটে যেত
পাগলটাকে একটা ছোট্ট ছেলে
মাস্ক দিয়ে গেল। হাসলো পাগলটা।


কী মুশকিল পাগলটার
এসবে কখনই পেট ভরে না
ভেবেছিলো আজ ভারত সেবাশ্রম বন্ধ
দেশ স্বাধীন হোক বা না হোক
কিছু খাবার জুটবে।


আর কী করবে
জলের টিউবওয়েলের কাছে গ্যালো।
জল খাচ্ছে পেট ভরে
একটু পরে
বালিগঞ্জ ফুট ব্রিজের সাইডের সিড়িতে
টানা ঘুম দিতে হবে।


পেট তো সায় দেয় না,
ওদিকে ক্লাবের সবাই
বিরিয়ানি খাচ্ছে।
বিরিয়ানি।
গন্ধ তো পাগল করে দিচ্ছে।


ঐ ছোট্ট ছেলেটা দেখতে পেলো
পাগলটা অপলক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে।
ছেলেটি একটু পরে
ফুট ব্রিজে উঠে এলো
হাতে প্যাকেট।


মাস্কটা খুলেছ কেন!
পরে নাও, অসুখ করবে।


পাগলটা হাসল
আর অসুখ,
সুখ কী অসুখ কী
কিছু তো পেট বোঝে না,
কী ভাবে বেঁচে আছি
তা তো সেই জানে,
ছোট ছেলেটা এসব বুঝলো না।
নাও, তুমি এটা খাও,
তোমার খুব খিঁদে পেয়েছে না!


পাগলটা হেসে আবার বলল
কী করে জানলে
কেমন করে বুঝলে
আমার খিদে পেয়েছে!


তোমার চোখটা কেমন ছলছল করছিলো
আর আমরা তো প্রায়ই এসব খাই
এখন আর ভালো লাগছে না,
তুমি খাও।


তুমি এসব কেমন করে শিখলে
কে শেখালো!


কেউ শেখায়নি,
তবে দাদু বলে
মানুষের কথা ভাবতে
মানুষের চোখ
আর পায়ের জুতো
মানুষকে চিনতে শেখায়,
তোমার চোখে অনেক কষ্ট
আমি জানি।
আমি অনেক দিন ধরেই
তোমায় দেখি।
আমি তো ছোট তাই...


তুমি ফিরে যাও
এটা নিয়ে যাও
তোমার বাবা দেখলে বকবে।
তোমার নাম কী!


আমার নাম উৎসব।
না গো এটা আমার
আমারটা তোমায় দিলাম
আসলে আমার রোজ রোজ
মাছ বিরিয়ানি চিকেন এসব ভালো লাগে না।


তোমার নামটা সার্থক
আর তুমি উৎসবের মতো
বড় মনের। শুধু মানুষ নয়
একজন আদর্শ পথিক হয়ে ওঠো।
আর আমি তো মানুষ নয়
দাদু তো মানুষের কথা ভাবতে বলেছে তোমায়।


তাহলে তুমি কী?


আমি পাগল, আমি একটা আস্ত পাগল...