অনুষ্ঠানে অনেকের উপস্থিতি অনুভব করছি।
অনেকেই বলেছিল
কবিতা আমি লিখতে পারি। সাহস দিয়েছিল।
সুপর্ণার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।
প্রথমবার চুমু খেতে খেতে
আমায় আলতো কামড়ে বলেছিল
এতো কবিতা লেখো কমরেড, দেশের জন্য, দশের জন্য
আমার জন্য তো লিখতে পারো একটা।
আমার রূপ তোমায় ভুলিয়ে দেয় না সবকিছু!


হেসেছিলাম।
বাড়ি ফিরে অনেক কেঁদেছিলাম।
কবিতা কী শুধুই প্রেম, প্রকৃতি!


কবিতা আসলে প্রতিবাদ,
মনের ভিতর জমে থাকা আগুন
কলমে সে নেমে আসবেই
রাতেই পরীর মতো।


ভিক্টোরিয়ার বিষাদ না নামলে
আমার অক্ষর মোহময় হবে না।


কমলেশ পালের থেকে কবিতা কতটা বুঝেছি
জানি না।
তবে এটুকু উপলব্ধি করেছি
এক জীবনীশক্তি কবিতা দেয়।


আজ এই সভায়,
সুপর্ণা যেমন নেই, তেমন নেই অমল, সুশান্ত
আরও কতজন।
সকলে বলেছিল একটা মেলা হবে
কবিতার মেলা। ওদের জন্যই আজ এই আসর।
বৈশাখী আড্ডার চা গরম কিছু টপিক।


কবিতা পাঠ চলছে,
এক এক করে করতালি
ছড়িয়ে দিচ্ছে জুঁই, বেল ফুলের গন্ধ।


আমার নাকে, এসব পেরিয়ে
একটা মৃত চামড়ার গন্ধ। একটা পোড়া ছায়া।


রাত, অন্ধকার কারখানার শব্দ
রাতের ডেকে যাওয়া প্যাঁচা ডানা।
কবিতার মেলা চলছে,
আমি হাসছি,
একটা সুদৃশ্য পাঞ্জাবি মুখে সেলফিও তুলেছি,
তবু মনের ভিতর আদি ছবি
আরাম কেদারার পাশে বাবার চায়ের কাপ
মায়ের উজ্জ্বল চোখ
স্ত্রীয়ের একটাই কথা, আমি আছি তোমার পাশে।


ঠিকই তো সুপর্ণার মতো অনেক চুমু
হেঁটে চলে গ্যাছে নিয়ন পেরিয়ে চা বাগানে অথবা এসপ্ল্যানেডে।
হাওড়ার স্টেশনেও নেমে গ্যাছে বাদলদা।
নাটকের এক অঙ্কের মতো আমি থমকে গেছি।


এত আনন্দের মাঝেও আমি একা
বড্ড একা,
কেন এমন হচ্ছে,
আমি বুঝতে পারছি না।
আমার কী তবে গ্রাস করছে একাকীত্ব!


কবিতার মেলা কী তবে ভ্রম,
নাকি সত্য।


শ্যামল এসে নাড়াতেই হুশ এলো
কিং সাহেবের ঘাটে বসে
আজব সব চিন্তা ডানা মেলেছিল।


অনুষ্ঠানে যেতে হবে,
গোট ত্রিশজন তো আসবেই,
ব্যস্ততা।
গভীর ব্যস্ততা।


আমার নাম ডাকছে,
স্টেজে উঠব। কবিতা পাঠ করব। পাহাড় পেরিয়ে
একটা কবিতার ডায়েরি আনতে পেরেছি।
তবে যে কবিতাটা পড়ব
সেটা তো আজই ফোনে লিখেছি।


অস্থির লাগছে।
হঠাৎ দেখলাম পাশে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
এসে বসল।
আমার দিকে তাকালো।
একটু হাসল।


আমি স্টেজে চলে গিয়ে
স্মৃতি থেকে একটা কবিতা বলে ফেললাম।


ঐ তো সুপর্ণা, অমল, সুশান্ত সকলে হাততালি দিচ্ছে,
কবিতার মেলা জেগে উঠছে।
সেই গাছের গুড়ির ভিতর দিয়ে
জন্ম নিচ্ছে কবিতা।
ক্যাফের টেবিলে হাল্কা হলুদ বাল্ব
আর একটা ছেলে
ম্যান্ডোলিন বাজাচ্ছে।


শুনেছিলাম ঐ ছেলেটার নাম সোমাদ্রি।
কদিন আগেই নাকি বাস দুঘর্টনায়
তবে কেমন করে এলো এখানে,
আমার তো কোনদিন
ওর ম্যান্ডোলিন শোনা হয়নি।


ও কী তবে দূর থেকেই
আবহ সংগীত বাজাচ্ছিল
যখন আমি কবিতা পাঠ করছিলাম।


হয়তো এটুকুই পাওয়া।
জীবনে ছাই হয়ে যাওয়া ছাড়া অনেক কিছু করার আছে।
আমার স্ত্রী, আমার ছেলে
সকলে আমাকে জড়িয়ে ধরছে।


কবিতা মেলা বোর্ডটা নিয়ে
আমি ফিরছি।
ফিরছি বাড়িতে।
না না বাড়ি কেন যাব
আজ তো আমার গন্তব্য কবিতা।
কেবলই কবিতা।