এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যাওয়া শ্রমিক মন কখনও কখনও জেগে ওঠে। আর তখনই মনের মহাকাশে নতুন নতুন পথ খুলে যায়। পথেরা তো বলতে চায় নিঃশব্দ নীরবতায় সেই ধূসর নেশার কথা। যে নেশার রূপক স্মৃতিতে পরাবাস্তবতা নেই। রয়েছে ছন্দের অমূল্য সব জমি পথ। আল পথ। নগরায়ণের ইচ্ছারা। যে ইচ্ছায় তুমিও আসো ট্রেনে করে। স্বপ্নপূরণের হারিয়ে যাওয়া রাস্তা, ঘর বাড়ির মধ্যে আমাকেই খুঁজে চলো। আমার কবিতাদের। আর আমি খুঁজি তোমার কবিতা। তুমি সে সব অনুভব করতেই পারো নিই। শুধু বলেছ মন দিয়ে খুঁজতে। আমার মনের মধ্যে যে কী হয়...সে তুমি বুঝবে হয় আয়ুকাল শেষের সন্ধিক্ষণে। বড় জটিল লাগে। ভারী কথা। আসলে কবিতার মেঘে অনেক জল জমে আছে। আকাশের তারারা তাই বলছে এটাই ভবিতব্য। যারা আবার এই মহাকাশ বিশ্বাস করে না, এই পদার্থ টান অনুভব করে না, তারা দূরেই থাকতে চায়। এই নিয়ে আবার পুরাণবিদ্যার সাথে কবিতার আধুনিকতার বিরোধ বেঁধে যায়।
.
কত জ্যোতিষ্ক...আর সেই জ্যোতিষ্কের টান নিয়ে ৩৬০ ডিগ্রীকে ভাগ করা হয় নয় ভাগে। সেখান থেকেই চলে গবেষণা। ভবিষ্যতের কথা। অনেকটা ত্রিকোণমিতি রয়েছে। কারণ সবটাই তো সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ঘটে। তবু কবিতার সাথে মিল পায় না এ জগৎ। পদার্থবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে একটু বুঝিয়ে বলি। --
.
ঠান্ডা কী? অনুভূতিমূলক উষ্ণতা অথবা তাপের অনুপস্থিতি। -৪৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইট হল সমগ্রভাবে তাপের অনুপস্থিতি। সকল বস্তু এই তাপমাত্রায় নিষ্ক্রিয় বা প্রতিক্রিয়াহীন। অতএব বলা যেতে পারে তাপের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমরা এই ঠান্ডা শব্দটি সৃষ্টি করেছি কারণ তাপহীনতাকে ব্যাখা করতে চাই। অন্যভাবে বলতে গেলে অন্ধকারের কোনও অস্থিত্ব নেই। অন্ধকার হল আলোর অনুপস্থিতি। আলোকে আমরা নিরীক্ষণ করতে পারি বা অধ্যয়ণ করতে পারি কিন্তু অন্ধকারকে পারি না।
.
ঠিক সেই মতোই পুরাণ কথার অসীম শক্তির ব্যাখ্যায় অব্যক্ত উপলব্ধহীনতা এক শূন্যতা। কবিতার সাথে এর মিল হল কবিতাও তো সৃষ্টি হয় সেই অব্যক্ত থেকেই। আসলে সৃষ্টি হল ব্যক্ত বা প্রকাশিত এক অংশ। আদ্যাশক্তির থেকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের উৎপত্তি। আর সেই বিষ্ণু অবতার কৃষ্ণ (কৃষ্ণের অর্থ সর্ব অনন্ত, অসীম, আকর্ষণ শক্তি)। গীতা অনুসারে– আমি আমার এক অংশের শক্তি দ্বারা এই বিশ্ব সৃষ্টি করিয়াছি। কৈবল্য দর্শনের মতে পঞ্চভূতের উৎপন্ন মিশ্রণের অনুপাত – ক্ষিতি ১/২ + অব ১/৮ + তেজ ১/৮ + মরুৎ ১/৮ + ব্যোম ১/৮। পাটিগণিতের হিসাবে ১/২ + ১/৮ + ১/৮ + ১/৮ + ১/৮  = ৮/৮ = ১ । অর্থাৎ স্থির শক্তির ১ অংশ প্রকাশিত। বাকী ৯৯ শতাংশ অজানা। এই ৯৯ শতাংশের খোঁজ করতেই কবিতা বের হয়েছে। পদার্থবিদ্যার শক্তির সাথে কবিতার শক্তির মিলিত পুরাণ কথা ক্রমশ প্রকাশ্য...
.
আসলে কবিতা একপ্রকার শক্তি। তা বুঝতে অনেকটা সময় লেগে গেল সভ্যতার। তাই এ সভ্যতা কবিতা উপত্যকার ঠিকানাটাই হারিয়ে ফেলেছে। কিভাবে! জানি না। তবে আমি খুঁজব....আপনাদের সাথেই।
.
(কৃতজ্ঞতা শক্তিতত্ত্ব - সৌকিল চ্যাটার্জী)