রবীন্দ্রনাথ এক সময় দেশ সম্পর্কে
রাষ্ট্র স্বপ্ন নিয়ে নানা কথা বলেছেন,
গান্ধীজি ও নেতাজি স্বপ্ন দেখেছেন।
জিন্না গালাগালি খেয়েছে
আর নেহেরু সাইজ করে
১৯৪৭ সালে ইতিহাসে বক্তৃতা দিয়েছেন।


নেতাজির বিশ্বাসকে আজও অনেকে
জল দিয়ে লালন করে। গান্ধীজি তো
আমাদের পকেটেই এদিক ওদিক করে।
এরা তো জানতো না, এদেশে একদল
নেতা কারবারীও জন্মাবে।
জন্মেছিল সেই আদি কাল থেকেই।
রক্তের সেই পশ্চিমী আরব মিশেছিল
অনেক কাল আগেই।
আমাদের এ টি জি সি-কে ঘেঁটে ঘ
করে দিয়েছিলো সেই মসনদের লোভ,
প্রেমিকার জন্য তাজমহল বানানোর সময়
আঙুল খোয়াতে হয়েছিল কত শিল্পী কারিগরকে।
আর এদেশকেই শুধু দোষ দেবো কেন
মিশরের পিরামিডগুলোর দিকে তাকালে
অবাক হয়ে যেতে হয়। অপূর্ব অনন্য সে
সৃষ্টির মহীরূঢ়।
আর এদেশে আইপিএল খেলা
এক লাখ তিরিশ হাজারের সীটের স্টেডিয়াম।
চকচকে খেলার মাঠে তো কোটি কোটি টাকার
জুয়া চলছে।
আজই আমার পেটিএম-এ একশো টাকা দিলো।
প্রলোভন দেখাচ্ছে।
জুয়া খেলতে বলছে শিক্ষিত সমাজকে।
কারণ এই রাষ্ট্র
খাদ্য, বাসস্থান, কর্মজীবন দিতে পারে না,
ফোরজি, ফাইভজি দিতে পারে।
আর মানুষও পাগলের মতো
নেটিজেন হয়ে উঠছে, উঠবেও ফাইবারে।
তবু দ্যাখো একটু কম্পিউটার জানি বলে
শুক্রকে তুঙ্গে করে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম
টিকা নেওয়ার জন্য।
কিসের টিকা, নাকি করোনার টিকা।
আমার শরীরে অর্ধ ঘুমন্ত কিছু অণুজীব
পরাশ্রয়ী হয়ে বেঁচে থাকবে
জীবন জুয়াতে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য।


ক্রিকেটে আমি না জিতলেও
জীবনে জিতব বলে রাত তিনটে থেকে
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব।
আরে তখন না হয় ঘুমাতে ঘুমাতে
একটু নেট ঘেঁটে নেব।


অবাক লাগে,
এমনই এক দেশ
যেখানে ভোট চাইতে,
মানে গদি বাঁচানোর জন্য
বা গদি দখলের জন্য
প্রতিদিন হেলিকপ্টার, প্লেন
উড়তেই পারে,
অথচ টিকা দিতে গেলে
কিনতে হবে।


একশো টাকার পেট্রল,
সূর্যমুখী তেল একশো আশি টাকা,
পনেরো দিনে চারগুণ বেড়ে যাওয়া করোনা
বেশ ভালোই তো আছি।
আমার তো করোনা হয়নি,
হলে তো সেটিং করে
অক্সিজেন জোগাড় করে নেব।


এই ভেবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করছি।
এই আমার দেশ।
দেশের নাগরিক।
দেশের নেতা।
দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ।


সেই তো আচ্ছে দিনের সাবকা বিকাশ।
অবসরপ্রাপ্তদের জন্য শুরুতে ঐ টিকার একটি ডোজ
আর সুদের হার ৫.২ শতাংশ।


এই ভারতবর্ষেই আবার ভোটের আগে
একটা টেরর অ্যাটাক।


সেই একই কল দেখিয়ে আবোল তাবোল বলে
ভোটের পর ভোট
আর শেষ করে দেওয়া কলি কালের শেষে
রাম নাম।


আরে রাম নাম সত্যই হয়ে যাচ্ছে রে,
এই নিবন্ধিকরণের কোন মানে নেই
এই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাড় এখন ২০৬ খানা নয়
এই দেশের হাড় এখন ৫৪২ টা।


হোক আরও দামী সংসদ ভবন,
হোক আরও উন্নত নবান্ন,
হোক আরও মহাকাশ যান
উন্নত প্রযুক্তির বুলেট ট্রেন।


দেশের মেঝেতে শুধু গর্ত নয়
কীট হেঁটে বেড়াচ্ছে।
পোকা মাকড়।
সেই আরশোলার মতো মানুষকে
তাই ভিক্ষা নিতে হবে।
আর দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল কার্পেট
এ যেন অস্কার পুরস্কার দিচ্ছে।
ওদিকে জ্বলছে গণ চিতা,
কাঠ নেই অবশিষ্ট আর।
উত্তাল এক সময়
উত্তাল কান্নার সমুদ্র।


ভারতবাসী হিসেবে অধিকার নেই আমাদের।


এই ভোট চাওয়ার নাম করে
করোনাকে সমুদ্রের মতো বাড়িয়ে
এখন অন্য দেশের কাছে সাহায্য চাওয়া।


বিচিত্র এক দেশ ও তার নেতারা।


নেতা নয়, এরা এখন ন্যাতার দল,
জীবনে রামায়ণ না পড়া কীটেরা
আরশোলা পাখনা গজানোর মতো
উড়তে উড়তে ঠাকুরের নাম নিচ্ছে
আর রাতের অন্ধকারে শকুনির মতো
পাশা খেলার ছক কষে নিচ্ছে
নিজেদের মৃত নাভি দিয়ে।


জানি না অনীশ বাবু, শঙ্খ বাবুর পরে
আরও কত আমাদের অগ্রজ
চুপ করে যাবে সৌমিত্রবাবুর মতো।


ক্ষতি যা হচ্ছে তা তো বাংলা ভাষার
মসনদে বসা, নবান্নের হাওয়াই চটিরা
কী করে বুঝবে
একটা সার্থক কবিতা
একটা কল্প বিশ্বের গল্পকে কালজয়ী করা
কতটা কঠিন।


কতটা কঠিন বেঁচে থাকার জন্য
বাংলা ভাষাকে যাপন করা।


আমার বুকের বাঁদিকে ব্যথা করলেও
রেজিস্ট্রেশন তো হয়ে গ্যাছে।


চিতা কাঠের আগুন ছবি তোলার ড্রোন
উড়িয়ে দাও।
মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন তো হয়ে গেছে।
টিকা নিলেও অদূরে
এমন এক ভাইরাস আসবে
যার নাম হয়তো এরাই দেবে কল্কি।


বলবে, কলি কালে মরতে হবে,
অনেক পাপ করেছ,
খেলো জুয়া,
পড়াশুনো তো অনেককালই বন্ধ
নিয়ে এসো নিজের দ্রৌপদীকে
আমরা লুটেপুটে খাই।


আমরা এমন এক দেশে জন্মেছি
যার নাম ভারতবর্ষ।


দেশের দর্শন, নেতার উদাহরণ
এখনও স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথেই আটকে।


সে তো হবেই।
অমর্ত্য সেন যেখানে গালাগালি খায়
সেখানে দশটা পিএইচডি করলেও লাভ নেই।


ভবিতব্য লাইন দাও,
মারপিট করো,
খিস্তি দাও, আর হাসতে হাসতে
বাড়ি ফিরে এসো টিকা নিয়ে।


শুধু টিকার নিবন্ধন হচ্ছে তো,
নাকি করোনার ভাইরাস
চুপ করে জ্বর বেশে
প্রবেশ করছে কবিতায়।


আমাদের শরীরে তো রক্ত নেই
কবিতা আছে।
কবিতাই আছে।