বেলেঘাটা আই ডি'র রমা'দি তার
ক্লান্ত অবসন্ন দেহটাকে টানতে টানতে
ভিড় বাসে ঝুলতে ঝুলতে যখন
সত্যেন বোস রোডের বাড়িতে এসে দাঁড়াল
তখন ন'টা বাজে ।
দাওয়ায় বসে অপেক্ষারত তার
সদ্য কৈশোর পেরুনো মেয়েটা
দশ বাই দশ টালির চাল ঘরে রাতজাগা মেয়েটা মেঘলা আকাশ মুখ করে বললে -


আবারও ডাবল শিফট করলে মা ? শরীর থাকবে তো ! একবারও আমার কথা ভাবলে না একলা ঘরে একা মেয়ে, বাপির নাইট ডিউটি ভুলে গেলে ? সব ভুলে গেলে!


সব মনে আছে রে মা, বাজারের ব্যাগ দাওয়ায় রেখে রমা'দি বলে - মিলিদি কাল আসেনি জানিস! ওর স্বামীটা মারা গেছেন কোভিডে সুচন্দ্রিমা তো নিজেই পজেটিভ, তাই বাধ্য হয়েই-


তোমার ভয় করে না মা?
- আমাদের ভয় করলে চলে না রে। তুই ভাতটা চাপা। আমি স্নান সেরে আসি -
রমাদি কলঘরে যাবে এমন সময় তার সদ্য কৈশোর পেরুনো মেয়েটা চেঁচিয়ে উঠল-
একি মা ! শাড়ীতে দাগ। এই নিয়ে তুমি ট্রেনে বাসে। ছি ছি! লোকে হাসবে। ঐটুকু সময় পেলে না?
- একটু দেরি হয়ে গেছিল রে।
জানিস, অক্সিজেন মাস্ক দিতে দেরি হলে সাত নম্বর বেডের ঐ ছোট্ট ছেলেটা বাঁচত না। তোর বয়সিই হবে। কি মায়া অই মুখখানা'য়!
রমা'দির চোখে জল এল। বলল- হাসির কথা আর বলিস না। দুষ্ট ওরা হাসছে যারা হাসতে দে ওদের কথা ছেড়েই দে
বিপদে ওরা পায়ে ধরে, নিরাশ হলেই চুলের মুঠি
তবুও আমরা ক্ষমা করে দিই, সেবা করি
সেবাই আমার ধর্ম কিনা !
এসব শুনে মেয়ে এবার গর্জে ওঠে। বলে, ছেড়ে দাও মা চাকরী এবার, বাপি ঠিক চালিয়ে নেবে


রমা'দি হাসে। বলে, শোনো মেয়ের কথা। তোর বিয়ে দিতে হবে। ছাদটাও ঢালতে হবে। কত কাজ বাকি। তাছাড়া কাজটা আমার ভালই লাগে। আমার সেবায় যখন কোন প্রাণ বাঁচে খুব ভাল লাগে। জানিস, গতকাল পঁচিশ জনের রিলিজ হল। ঝড়ের বেগে ফিরে গেল যে যার প্রিয়জনের কাছে যেভাবে খাঁচার পাখি বনে ফেরে। এ দৃশ্য খুবই আনন্দের। গর্ব হয় মানুষের সেবায় কিছু করতে পারায়।


অভিমান ভুলে মেয়ে বলে -  
সত্যি মা এভাবেও তুমি ভাবতে পারো
আর ক'টা বছর যাক, এইচ এস টা দিই
তারপর ভর্তি হব নার্সিং-এ, গর্ব করে বলবে তুমি
মেয়েও আমার নার্স দিদি।


সত্যি রমা'দি ধন্য তুমি।
তুমি আছ বলেই তোমরা আছ বলেই
ভারতবর্ষ সেদিন উঠে দাঁড়িয়েছিল
তোমরা আছ বলেই ভারতবর্ষ সেদিন হাততালি দিয়েছিল থালি বাজিয়েছিল।