সবাই বলে মেয়ে নাকি খুব বাপসোহাগি ...
বলি ওকে মাঝে মধ্যে শাসন টাশন করবেন,
না হলে যে একেবারে গোল্লায় যাবে।
মেয়েটা আমার সত্যিই বাপসোহাগি ...
আমার একমাত্র মেয়ে।
আমার মেঘপরি।
ওকে দেখতেও পরীর মত...
টানা টানা চোখ,
টকটকে রঙ
আর মেঘের মতোই কালো ঘন চুল।
প্রত্যেক শনিবারে সেই চুলে গরম তেল ম্যাসেজ করে দিতাম আমি নিজে।
আমার মেঘপরি...
যখন আধো আধো গলায় বাপি বলে ডাকত,
মনে হত ওকে উজার করে দিই।
সুখের জোয়ারে ভাসিয়ে দিই ওকে ।
ওর আধো বুলি রেকর্ড করে রাখতাম...
-অফিসে কাজের ফাঁকে শুনব বলে।
তারপর ওর মা যখন নেলপলিশ পড়ত...
নিজের কচি কচি হাতদুটো বাড়িয়ে দিত...
মা আমারটাও...মা আমারটাও।
কত রঙের নেলপলিশ কিনে দিয়েছি ওকে...
সেই রঙ ও গোটা ঘরের দেওয়ালে লাগিয়েছে।
কেউ জিজ্ঞেস করলে ওর মা বলত...
আমাদের বাড়িতে একটা হনুমান থাকে...
সেই করেছে এই হাল।
পায়ে কত্থকের তাল ছিল খুব ভাল...
ছোট থেকেই টিভি দেখে দেখে হাত ঘুড়িয়ে নাচত।
বড় সখ করে একজোড়া সোনার নুপুর গড়িয়ে দিয়েছিলাম।
অফিস থেকে ফেরারা সাথে সাথেই আবদার...
'বাপি কি এনেছ?'
ব্যাগের চেনটা খুলে হুমড়ি খেয়ে পড়ত...
কিছু না কিছু আনতেই হত আমার পাগলিমা টার জন্য।
খুব জেদি ছিল আমার মেয়েটা।
লোকে বলত--মেয়ে মানুষ, এত জেদ ভালো না...
বিয়ে থা দেবেন তো নাকি !
এবেলা রাশ টানুন !
নয়ত পরে পস্তাতে হবে।
আমি হাসতাম...
আর ওকে আরও আদর দিতাম।
পড়াশুনোতেও খুব মেধাবী ছিল ও
এত আদর এত যত্ন পেয়েও,
মেয়েসোহাগি বাপটাকে কখনও নিরাশ করেনি সে।
ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে গ্রাজুয়েশন পাশ করল।
আত্মীয় স্বজনে বলল ...
মেয়ে নাকি আমার বড় হয়েছে !
বিয়ে দিতে হবে !
ওদের কথায় সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম...
কবে বড় হল আমার ছোট্ট মেয়েটা !
এই তো সেদিন দুধ খাবার ভয়ে মায়ের কোল ছেড়ে...
আমার কোলে এসে মুখ লুকাতো।
ভালো ঘরে বিয়েও দিলাম ওর।
ছেলে মস্ত ডাক্তার ---অনেক সম্মান।
ভাবলাম আমার মেঘপরি বোধহয় এতদিনে রাজরানী হল।
রাজরানী ! হুম রাজরানীই হল আমার মেয়েটা!
ফুলসাজানো খাটে রাজরানীই তো শুয়ে থাকে...
তাই না ?
শুধু ও আজ আর বাপি বলে ডাকছে না।
খুব ঘুমকাতুরে ও
হ্যা, ও তো ঘুমোচ্ছে !
সযত্নে বড় করা আমার সোহাগমণিটাকে
আমি ভরসা করে যাদের হাতে দিয়েছিলাম...
তারাই ওকে ঘুম পাড়িয়েছে।
আজ আমার অনেক আনন্দের দিন।
আমার বাপসোহাগি মেয়েটা...
এতদিনে রানী হয়েছে! রানী !
কিন্তু বাপটাকে বোধহয় ভুলেই গেছে।
তাই ও আর কথা বলছে না--- শুধু শুয়ে আছে।
থাক মা শুয়ে থাক তুই।
শুয়ে থাক ।।