বাজান!
ভুলি নাই মনে আছে আজও
সেই ছোট্ট বেলার কথা
যেদিন তুমি এই ছোট্ট হাতটি ধরে
নদীর ঢালু দিয়ে গেঁয়ো পথটা ধরে
নিয়ে গিয়েছিলে পাশের গ্রামের মক্তবে
গায়ে ঠিক তোমারই মত
পায়জামা পাঞ্জাবী পরায়ে
মনে আছে আজও
পথের বাঁকে চুনা বাড়ির মোড়ে
বায়না ধরি “নইটানা” খাবো
তুমি সেদিন বট গাছের নিচের বসা
নিতাই কর্মকারের দোকান থেকে
অকৃতিম ভালবাসায় টানা দিলে কিনে
সে কথা ভুলি নাই বাজান!
আজও মনে আছে।


বাজান যেদিন
প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড় শেষে
হাট থেকে ফেরার পথে
গ্রামের কাঁদা মাখা পিচ্ছিল পথটা দিয়ে
ছোট্ট আমি পারছিলাম না হাঁটতে
সেদিন তুমি বাড়ি এসেছিলে
পুরুটা পথ আমাকে কাঁধে নিয়ে
সেই পিতৃআদর! ভুলি নাই বাজান!
সে কথা আজও মনে আছে।


বাজান,
আষাঢ়ের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলা শেষে
ভিজা চুলে যখন ফিরতাম বাড়ি
তোমার সেই আলতো করে কান ধরা
মায়াবী শাসন,
আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজে খেলবি?
পরক্ষণেই পরম মমতায় মুছে দিতে
ভিজা চুল কাঁধের গামছাটা দিয়ে
সেই কথা!
ভুলি নাই বাজান আজও মনে আছে।


সে দিন দুপুর বেলা চক থেকে ফিরে
যখন দেখলে প্রচণ্ড বাথায় করছি ছটফট
কোন এক জটিল রোগে
মনে আছে আজও
তোমার সেই তীব্র ব্যাকুলতা
কতটা উদ্বিগ্নতায় নিয়ে গিয়েছিলে
পাশের গ্রামের কবিরাজের কাছে
স্নেহঝরা মমতায় নিজ কাঁধে করে
ভুলি নাই বাজান!
সে কথা আজও মনে আছে।


বাজান! যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষার কারণে
প্রায় মাসাধিকাল ছিলাম খালার বাড়িতে
দেখেছি,কত পরম দায়িত্ব বোধ থেকে
বাজান আমার,বাজারের বড় মাছ আর
ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে চলে আসত সপ্তাহান্তে
ভুলি নাই বাজান!
সে কথা আজও মনে আছে।


প্রতি শনিবার বুধবার ভাল রান্না হলে
নিজের পাশে বসিয়ে নিজে না খেয়ে
মাছের বড় টুকরাটা তুলে দিতে আমাদের পাতে
মনে আছে বাজান,
ভোর বেলায় কাজে যেতে ক্ষেতে
সকালের খাবার রান্না হওয়ার আগেই
রান্না শেষে,মা দিয়ে দিত খাবার
মাথায় করে নিয়ে যেতাম ক্ষেতে
ভুলি নাই বাজান
সে কথা আজও মনে আছে
নিজে  অর্ধেকটা খেয়ে,
বাকী অর্ধেকটা পরম মমতায়
আমাকেই খেতে দিতে।


হে আল্লাহ! বাজান নেই আজ
দুনিয়ার মাঝে
আছে আজ সে তোমার দরবারে
হে আল্লাহ দয়ার সিন্ধু
অদ্বিতীয় মহান
নেই কেহ ত্রিভুবনে তোমার সমান
করুণা চাই আজ তোমার কাছে
বাজানকে মোর,আজ দিয়ো তুমি ঠাঁই,
তোমার আরশের শীতল ছায়াতলে।।