জন্মান্ধ মেয়েটি
আমার; স্মৃতিময় কৈশোরের সুখ,
ঝলমলে জরিন ওড়নার ভালো লাগা,
যৌবনের টানটান বুক।
আমি আর মেয়েটি
একি সাথে চিনেছি শৈশব,
কৈশোর আর-
কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের প্রকৃতি ।
কোমল ত্বকের স্পর্শ-পেলব
ছুঁয়ে বুঝেছি,
পরম যুবতী আমরা তখন।
ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের তীব্র উদ্দীপনায়
ভালবাসতে শিখেছি, চন্দন,পুদিনা
কাগজিলেবু, ধনেপাতা,
তুলসী, কাঁঠালি-চাঁপা আর
সোঁদা মাটির ঘ্রাণ ...
সে আমাকে কখনও উদ্ধত হ’তে দেয় নি,
ছলনার পারদর্শিতায়-
হ’তে দেয়-নি কামুক স্বৈরিণী ।
আমার সংযমী জীবনের সমগ্র যাতনা,
ধৈর্য্য আর ত্যাগের নিরব সাথী; সেই মেয়েটি
শৈশবে ওর ভিখিরিণী মায়ের পাশে
ও-কে দেখতাম লাজুক অবয়বে
মিষ্টি হেসে;
মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে ।
মা তার ভিক্ষা চাইছে জনারণ্যে ...
মেয়েটির চোখ দু'টোয় কখনও তারা দেখি-নি
কেবল-ই ফ্যাকাশে অক্ষিগোলক দু'টো - শাদা;
কোটরে গাঁথা ।
কেন যেন, আয়নায় কখনও নিজের চোখ দেখতে পাইনি ।
নিজের চোখের তারায় যতবার খুঁজেছি
উচ্ছল মায়া, তারুণ্যের ঝিকিমিকি,
দেখেছি, আমার চোখে সেই মেয়েটির সাদা ফ্যাকাশে চোখ;
অক্ষিগোলক - তারাহীন ।
আজ অব্দি আমিও তাই
জন্মান্ধের মতই,
পথ চলি- তৃতীয় নয়নের আলোকে
রঙ চিনি, অনুভুতির অদৃশ্য রঙে ।
আমার সমস্ত জীবনে
একটি গোলাপ-ই কেবল ছিঁড়েছি,
যৌবনের সমস্ত তাড়ণাকে
নিয়ন্ত্রিত আবেগে পরিনত করার ইচ্ছে নিয়ে
ভালোবাসার গোলাপটি আমি উৎসর্গ করেছি ওই-
অন্ধ যুবতীকে,
১৯৯৪-র " ভালোবাসা দিবসে "।