আমার বয়স হয়েছে—
এই কথা এখন শুধু শরীর না,
মনেও ঘা দেয়
আগে যেখানে সকাল মানে ছিল-
নতুন দিনের সম্ভাবনা,
এখন সকাল মানে শুধু অফিস,
রিকশা, কোলাহল আর মুখের কৃত্রিম হাসি।
চোখ খুললেই মনে পড়ে,
আজও একটা দিন বাঁচতে হবে—
কারণ মরার সময় হয়নি,
আর বাঁচার সময় নেই।
আমার বয়স হয়েছে—
মোবাইল এখন আর গান বাজায় না,
শুধু বিলের মেসেজ আসে।
ফোন এখন বন্ধু ডাকেনা,
শুধু ‘জরুরি কল’ আর 'পেমেন্ট রিমাইন্ডার' মনে করিয়ে দেয়।
বন্ধুরা সবাই ব্যস্ত—
একেকজন যেন একটা নিজস্ব গ্রহ,
যার কক্ষপথে আমি নেই।
আমার বয়স হয়েছে—
সম্পর্কগুলো এখন কাঁচের গ্লাস—
দেখলে ঝকঝকে,
ছোঁয়া মাত্র ভেঙে পড়ে।
যারা বলেছিলো, "সবসময় পাশে থাকবো",
তারা পাশে নয়,
পাশ কাটিয়ে গেছে।
আমার বয়স হয়েছে—
শরীরের শব্দ শুনতে পাই,
হাঁটু বলে ধীরে চল, কোমর বলে বেঁচে থাক,
হৃদয় বলে— “তুই কি এখনো বেঁচে আছিস রে?”
ডাক্তার এখন নাম ধরে না,
বলে— “আপনার বয়স তো বেশ হয়েছে, সাবধানে চলুন।”
আমার বয়স হয়েছে—
বাচ্চারা বলে “আঙ্কেল”,
আর তরুণেরা বলে “সিনিয়র ভাই”।
আমি মাঝখানে দাঁড়িয়ে বুঝি,
আমি এখন ইতিহাস, উৎসাহ না।
আমার বয়স হয়েছে—
খালি সময় পেলে মায়ের মুখ মনে পড়ে,
মা এখনো বেঁচে থাকলে ডাকে না,
চুপচাপ থাকেন—
কারণ তিনিও বয়সের কাছে হার মেনেছেন।
মায়ের চোখের ক্লান্তি এখন আমার আয়নার প্রতিবিম্ব।
আমার বয়স হয়েছে—
যে সংসার গড়েছি পাথরের মতো,
তাতে এখন ভালোবাসা নেই,
আছে হিসাব—
কে কত দিলো, কে কত নিলো, কে কার পাশে ছিলো না।
স্ত্রীর সাথে এখন আলোচনা হয় না,
হয় শুধু সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব, এবং সন্তানের স্কুল ফি।
আমার বয়স হয়েছে—
আগে ধর্ম মানে ছিলো আত্মা, এখন অনুষ্ঠান।
আগে দেশ মানে ছিলো স্বপ্ন, এখন খবরের কাগজে নাম খোঁজা।
আগে প্রতিবাদ মানে ছিল গর্জন, এখন তা মানে চাকরি হারানোর ভয়।
আমার বয়স হয়েছে—
মানুষ এখন মুখে হাসে, মনে বিষ,
সবাই মুখোশ পরে ঘোরে,
আর আমি আমার মুখটাই ভুলে গেছি।
আমার বয়স হয়েছে—
বুকের ভেতর যে আগুন জ্বলতো—
সে এখন ছাই,
আর ছাই-ঢাকা স্মৃতিরা কখনো-কখনো হঠাৎ জেগে উঠে বলে,
“তুই কি তোর নিজের কথা একটুও ভাবিস না?”
আমার বয়স হয়েছে—
তবুও বেঁচে আছি—
কারণ মরতে পারি না,
আর বাঁচতেও শিখিনি নতুন করে।
এখন আমি শুধু চলি,
একটা যন্ত্রের মতো,
যার মেরামত কেউ করে না,
দিনরাত শুধু ব্যবহার করে।