তুমি কেবল জন্মদাত্রী নও
তুমি সেই প্রথম আলো,
যার নরম দীপ্তিতে গড়ে ওঠে চোখের দৃষ্টি,
যার উষ্ণতায় জেগে ওঠে হৃদয়ের ব্যাকুলতা।
তোমার আলোয় আমরা দেখি প্রথম পৃথিবী,
তোমার ছায়ায় শিখি— কীভাবে ভালোবাসা হয় নিঃশর্ত।

তুমি ছিলে আমার আগে,
থাকবে আমার পরে—
যতদিন দেহে রক্ত প্রবাহিত,
ততদিন তুমি সঞ্চারিত থাকবে প্রতিটি নিঃশ্বাসে,
চিন্তায়, স্বপ্নে, সংলাপে।

তোমার কোলে আমি পেয়েছি সেই আশ্রয়—
যা সময়কে স্থির করে,
যেখানে চোখ বুজলেই
শুনে যাই এক মায়াবী নিঃশব্দ সুর—
যার নাম শুধু তুমি।
তুমি সেই প্রথম পৃথিবী,
যেখানে জন্ম নেয় আত্মার ভাষা,
যেখানে ভালোবাসা হয় শিকড়ের মতো গভীর।

তুমি যে ঘর সাজাও,
তা দেয়ালঘেরা কোনো বাসস্থান নয়—
তা এক অনুভবের উপাসনাক্ষেত্র,
যেখানে প্রতিটি বস্তুতে লেগে থাকে তোমার স্পর্শের স্নিগ্ধতা।
তুমি যে রান্না করো,
তা শুধু আহার নয়—
তা এক দোয়া,
যার প্রতিটি গন্ধে মিশে থাকে তৃপ্তির ছায়া।

তুমি আমার সাহস,
তুমি আমার দিকনির্দেশনা,
রাত যত গভীর হয়, ভয় যত ঘনায়—
তোমার কণ্ঠস্বরেই খুঁজে পাই আমি ঈমান।
তুমি আমার কান্নার নিঃশব্দ নিরাময়,
তুমি আমার জয়ের গোপন অশ্রুবিন্দু।

তোমার পায়ের নিচে কেবল বেহেশত নয়—
সেখানে জমা থাকে বিসর্জনের শত ইতিহাস,
তুমি যার কোনোটি কাউকে জানাও না,
শুধু মৌন মুখে বয়ে বেড়াও।
তোমার দেহ ব্যথায় ক্লান্ত হলেও,
তুমি দাঁড়িয়ে থাকো অচল এক স্তম্ভ হয়ে—
আমার আকাশের একমাত্র উত্তরের তারা।

তুমি মানুষ নও, আম্মা—
তুমি স্নেহের সংজ্ঞা,
মানবতার অদৃশ্য ব্যাকরণ।
তুমি কোনো ধর্ম নও—
তুমি সেই মৌলিক করুণা,
যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে সব ধর্ম, সব বিবেক।

তুমি মৃত্যু নও—
তুমি মৃত্যুর ঊর্ধ্বে এক অবিনশ্বর আবেগ,
যা মৃত্যুর পরেও রয়ে যায়—
শুধু নাম হয়ে নয়,
আলো হয়ে, ছায়া হয়ে, প্রার্থনা হয়ে।

তুমি সেই নাম— আম্মা—
যা উচ্চারণেই শান্তি নেমে আসে,
যা নিঃশব্দে বললেই জীবন ফিরে আসে,
শরীরের ভেতরে আলো জ্বলে ওঠে,
আত্মা পায় পথের ঠিকানা।

তুমি সেই অন্ধকার,
যেখানে হারিয়ে গেলেও ভয় পাই না—
তুমি সেই আলো,
যেখানে ফিরে এলেই চোখে জল আসে না আর।
তুমি শুধু আমার আম্মা নও—
তুমি আমার অস্তিত্বের মৌলিক অনু,
আমার কালের মূর্ত হৃদয়ছায়া।

তোমার ছোঁয়ায় পৃথিবী পায় রং,
তোমার নিঃশব্দ স্পর্শেই শুরু হয় জীবন,
তোমার অভিব্যক্তিতেই শেষ হয় ক্লান্তি।
তুমি আছো—
প্রতিটি প্রার্থনায়, প্রতিটি নিঃশ্বাসে,
প্রতিটি ভোরে, প্রতিটি বিদায়ে।

তুমি কোনো কবিতার বিষয় নও—
তুমি নিজেই এক জীবন্ত কবিতা,
যার শেষ পঙ্‌ক্তি কেউ কোনোদিন লিখে উঠতে পারে না।