তুমি আয়নায় খুঁজো নিজের মহিমা,
গায়ে জড়াও সোনালি জ্যোতি,
পায়ে মেলে দাও ক্ষমতার অগ্নিপথ,
মাথায় গড়ো অহংকারের অট্টালিকা।
কিন্তু শোনো হে দম্ভের দাস,
যদি হৃদয়ে না জ্বলে বিনয়ের অগ্নিশিখা,
তোমার সব আভিজাত্য,
সব শৌর্যের মুকুট
হয়ে যাবে ধূলিকণার মতো তুচ্ছ,
যা সময়ের প্রবল ঝড়ে
মুছে যাবে এক নিমেষে।
তুমি যখন সিংহাসনের শীর্ষে দাঁড়িয়ে
অহংকারের অট্টহাসি হাসো,
জানো কি? সেই হাসির প্রতিধ্বনি
ডুবে যায় বিনয়ের সাগরে।
এক বিনীত দৃষ্টি, এক নত হৃদয়—
তার দীপ্তি এমন ক্ষমতাশালী,
যে সেখানে ম্লান হয়ে যায়
তোমার সমস্ত দম্ভ,
ম্লান হয়ে যায় পৃথিবীর সব দাপট।
যদি তুমি গরিব হও, মলিন পোশাক পরা,
তবু যদি তোমার আত্মা আলোকিত থাকে
বিনয়ের দীপ্তিতে—
জেনে রাখো,
তুমি সেই অমোঘ শক্তি,
যার ছায়ায় নত হয় সকল সিংহাসন।
তোমার বিনয়ের শিখায়
জ্বলে উঠে মানবতার চিরন্তন অগ্নি,
তোমার শেকড়েই জন্ম নেয়
অক্ষয় সত্যের বীজ।
বিনয় হলো মানুষের শ্রেষ্ঠ সিংহাসন,
যেখানে অহংকার চূর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে।
অহংকার হলো নীরব বিষ,
যা কাবু করে আত্মার শিরা-উপশিরা;
কিন্তু বিনয়—
সে হলো অমৃতের ধারা,
যা জাগিয়ে তোলে অন্তরের আকাশে
শাশ্বত সত্যের সূর্য।
তাই শোনো হে দম্ভিত মানব,
মানুষের মহত্ত্ব মাপা যায় না
বাহ্যিক বিভায়।
যে হৃদয় বিনয়ের ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত,
সে-ই প্রকৃত বিজয়ী,
সে-ই অদৃশ্য মহীরুহ,
যার ছায়ায় প্রশমিত হয়
সমস্ত ক্ষুব্ধ পৃথিবী।
আর মনে রেখো—
যদি তোমার হৃদয়ে না থাকে বিনয়,
ধরে নাও, এ জীবন এক মৃত সত্তা—
অর্থহীন, মরুচ্ছায়ার মতো শূন্য।
কারণ স্রষ্টা তোমাকে গড়ে তুলেছেন
মানবিকতার দীপ্তি নিয়ে,
অহংকারের অন্ধকার নিয়ে নয়।
তিনি দিয়েছেন এক শুদ্ধ হৃদয়,
যেখানে বিনয়ই তোমার সত্যিকারের মুকুট।
মানুষ হতে হলে শিখে নাও
বিনম্রতার শিখর স্পর্শ করতে—
কারণ সেই নতমুখী যাত্রাতেই
লুকিয়ে আছে অজেয় বিজয়ের রাজপথ।