এঁদের বলা হয়েছিল—
বিকেলে মাঠে খেললে
ভবিষ্যৎ ফাঁকা থাকবে,
জীবন গড়তে হলে মাঠ নয়,
টিউটরের কাছে যাও!
তারা বিশ্বাস করলো,
রোদ মাখা ছেলেবেলা নয়—
গণিতে একশো পাওয়াই বাঁচার সিঁড়ি।
পাড়ার গোলপোস্ট সরিয়ে
তারা বসলো পড়ার টেবিলে—
আর সেই ফাঁকা মাঠে গজিয়ে উঠলো
উচ্চশিক্ষার নাম ধারী ইট-বালু-কংক্রিট।
একরঙা ছকে ছকে চলতে চলতে
তাদের মুখ থেকে হারিয়ে গেলো চিৎকার,
হাসি ধীরে ধীরে ঢুকে পড়লো
পাসওয়ার্ডে লক করা মোবাইল স্ক্রিনে।
বিনোদন?
তা যে অপচয়,
তা তো বড়রা আগেই বলে রেখেছিল
তাই নাটক বন্ধ হলো,
হারমোনিয়াম স্তব্ধ হলো,
খেলার মাঠে নামল না আর কেউ—
এঁরা ঢুকলো ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে,
আর বেড়িয়ে এল একলা,
ভারাক্রান্ত, ক্লান্ত হয়ে।
শিশুরা বড় হলো—
কিন্তু মন রইলো অপুষ্ট,
সম্পর্ক রইলো অস্পষ্ট
একাকীত্বে জড়িয়ে গেল
কেউ মাদক, কেউ গ্যাংয়ে,
কেউ ভালোবাসা খুঁজলো
ক্লাস সিক্স সেভেনে,
কেউ পায়নি কিছুই—
তাই কেটে দিলো কবজি,
চুপচাপ, কারও চোখে না পড়ে,
ফেসবুক স্টাটাস দিয়েও
যেন কিছু বোঝাতে পারল না
আর তখন,
হঠাৎ মুরুব্বিরা বললেন—
এই প্রজন্মটা এমন হয়ে যাচ্ছে কেন?
ভুলে গেলেন—
আপনার হাতে ছেঁড়া পাখনার ছায়া-
ওরা টেনে বেড়ায়
আপনার অন্ধ নীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে
এ প্রজন্ম আজ হারিয়েছে
অস্তিত্ব, দিক, ছায়া, সুর।
এঁরা জানে নাহ
কাকে জড়িয়ে কাঁদতে হয়,
এঁরা জানে নাহ
কীভাবে পড়ে গিয়ে উঠতে হয়
কিভাবে হেরে গিয়ে জিততে হয়
জানে শুধু—
নোট, মক টেস্ট, ক্যারিয়ার, স্ট্যাটাস—
কিন্তু জানে না জীবনের স্বাদ কেমন।
একটা সময় ছিল—
যেখানে বিকেল মানেই খেলাধুলা,
চিৎকার, চেচামেচি
আজ বিকেল মানে—
টিকটক, ইনস্টাগ্রাম রিল,
গেমিং কনসোল—
বাস্তবতার বদলি সংস্করণ।
এঁরা প্রেম করে স্ক্রিনে,
কিন্তু ভালোবাসতে ভয় পায়
এঁরা সাহসী প্রোফাইলে,
কিন্তু ভেঙে পড়ে
মানুষরূপের সামনে
কারণ এঁরা জানে নাহ—
মানুষ হয়ে উঠা
আর মানুষ হয়ে থাকা—
দুই আলাদা বিদ্যা।
এঁরা বাঁচে,
কিন্তু বেঁচে থাকে না
হাসে,
কিন্তু মন খুলে হেসে ওঠে নাহ
চায় ছুঁতে—
কিন্তু স্পর্শ দিতে ভয় পায়
এঁদের পৃথিবী-
দালান-কোঠা আর স্ক্রিনে বন্দি,
মাঠ, পুকুর, উঠান, গাছ—
সব রয়ে গেছে বাবা-মার স্মৃতিতে,
আর সন্তানের অলিখিত অতৃপ্তিতে।
এই প্রজন্ম কি হারিয়ে গেল?
নাকি তুমিই তাকে ঠেলে দিয়েছিলে?
অন্ধ গলিতে?
যখন এঁরা রোদে দৌড়াতে চাইত,
তুমি তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিতে
যখন এঁরা গান ধরতে চাইত,
তুমি বললে,
এসব করে রুটি রুজি আসে নাহ
আজ এঁরা রুটি খায়,
কখনো হাসে
কখনো খেতে খেতে কাঁদে—
এঁরা জানে নাহ কেন কাঁদছে,
আমরাও আর জানি নাহ
কেন আমরা এত দূরে
চলে গেছি এঁদের হৃদয় থেকে।