পাঁচ বছরে একদিন,
গলায় গর্জে ওঠে ভোটের দাবি।
সারে তিনশো ছেঁড়া,
ঝলসে যাওয়া পোস্টারে
লুকিয়ে থাকে স্বপ্ন—
জানি যে লাউ সেই কদু
তবুও পরিবর্তনের করুণ আহবান।

তারপর?
নির্বাচন শেষ!
সময় জেগে ওঠে কালো ছায়ায়—
আমার কণ্ঠ নিঃশব্দ, চোখ বধির,
আমি শুধু করদাতা,
আর ওরা হয়ে ওঠে
সর্বশক্তিমান স্বৈরশাসক।

বুথের অন্ধকারে ঢোকার আগে
বুকের ভেতর জমে ধৈর্যের আগুন,
ভোটের বাক্স পাহারা দেয়
লাঠিপেটা, দমন,
আর সরকারি বাহিনীর জবরদস্তি।

চাকরির দরজায় লাগানো তালা খুলতে হয়
দলের রঙিন টোকেনের ছাপ—
আর শিক্ষা, মেধা বিক্রি হয়
দলের ছত্রছায়ায়,
যোগ্যতার স্বপ্ন ভুল হয়ে যায়।

রাস্তায় ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির সুর,
নির্লজ্জ বিতর্কে রাত জেগে চিৎকার।
সামাজিক মাধ্যমে সন্ত্রাসের তাণ্ডব—
“দেশদ্রোহী” বলতে কাউকে ভয় পায় না কেউ।

ক্ষমতার লোভে পদ-পদবির বণ্টন,
একদিকে শাসক,
অন্যদিকে দালালসেনা।
সৎ মানুষের নামে ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ,
তারাই হয় দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু।

বিরোধিতা মানেই গুম-খুন,
প্রশ্ন করলেই সাজানো মামলা।
পেছনে কেউ ফিসফিস করে—
শান্ত থাক, না হলে শেষ দেখাব।

জাতীয় পতাকা আজও গর্বের প্রতীক,
কিন্তু যারা রক্ত দিয়েছিল মাটির জন্য,
তারা আজ ধুলোঝরা কাপড়ে ঢাকা পড়ে পথ হেঁটে যায়।
আর যাঁরা শুধু দলের পতাকা উড়িয়েছে,
তাঁরাই শাসকের আসনে বসে রাজত্ব গড়েছে।

জমি, নদী, বনভূমি—
সবটাই ভাগ হয়ে যায় ক্ষমতাধর সিন্ডিকেটের হাতে।
আদালত?
সে শুধু প্রদর্শন করে
স্বাধীনতার নাটক।
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে আছে
বিকৃত বিচার।

শিক্ষা আজ ব্যবসার নিয়তি,
স্বাস্থ্যসেবা মানেই ঘুষ ও দুর্নীতি।
সাংবাদিকতা?
সত্য প্রকাশ করলেই মৃত্যু শাস্তি নিশ্চিত।

মহাসড়কে পড়ে থাকে নিরীহ মানুষের লাশ—
বিক্ষোভ থামাতে জোর প্রয়োগ,
গণতন্ত্র মারা যায়।
বিচার চাওয়ায় ওঠে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কথার ঝড়,
স্বাধীনতা মুখরোচক শব্দ মাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা আর প্রশ্নের অবকাশ নেই,
রাজনৈতিক ব্যানারে ছবি তোলাই এখন প্রাধান্য।
প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি—
মেধা হারিয়েছে তার আসল মান।

গ্রামের কুঁড়েঘরে আজও আলো নেই,
চিকিৎসার অভাব, পথ হাঁটার দুর্ভোগ।
শহরে বিলবোর্ডে ঝলমল করে
ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর বিভ্রান্তিকর হাসি।

প্রেসক্লাবের সামনে মায়ের কান্না থেমে যায় স্লোগানে,
শ্রমিকের মরণ অবহেলায় ধরা হয় ‘দুর্ঘটনা।
মন্ত্রী বলে,
এই মৃত্যু পরিকল্পনার অংশ নয়।

মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতন গোপনে চলে,
স্কুলে মাস্টার হয়ে দাঁড়ায় ভীতিকর আতঙ্ক।
প্রশ্ন করলে ক্লাস থেকে বাদ পড়ে যায়—
এটা কোথা থেকে শিখেছিস?

এক মেয়ে রাতে বের হলে,
প্রশ্ন ওঠে তার চরিত্রে।
ধর্ষক মন্ত্রী বক্তৃতায় ঢালেন
নৈতিকতার ধোঁকা।

থানায় মামলা করতে গেলে
প্রথমে বিচার হয় জামের গুণগত মান আর রংয়ের ওপর।
পুলিশ ফাইল চাপা দেয়—
কারণ অপরাধী ‘উপরমহলের লোক’।

মানসিক বিপর্যয়ে কিশোরের আত্মহত্যা—
তার মায়ের গলায় ঝুলছে ছেলের মৃত্যুর ছবি।
রাষ্ট্রের জন্য তা শুধুই ‘তথ্য’—
কারণ সে ‘বিরোধী পোস্ট’ করেছিল ফেসবুকে।

ধর্মের নামে রাস্তায় নেমে আসে অশান্তি,
মন্দির ভাঙা, গুজব ছড়ানো দৈনিক কাজ।
রাজনীতিবিদ হাসে, বলে—
এটা মাত্র আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

নির্বাচনে লড়াই মানে এখন নয় ভোট,
এভিএমের বোতামে লেখা থাকে ভাগ্যের রং।
বিরোধী দলের পোস্টার ঝুলে পড়ে খুঁটির মাথায়,
তাদের প্রার্থী হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়।

তরুণেরা মুখ ফিরিয়ে নেয়—
দেশে থাকা মানে সংগ্রাম আর আত্মত্যাগ।
বিদেশে যাওয়ার টিকিট মানে মুক্তি,
বাঁচা অর্থে পালিয়ে যাওয়া।

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর—
লাইনে দাঁড়িয়ে দূতাবাসের সামনে।
দেশ তাদের ভালোবাসেনি—
তাদের স্বপ্ন একটাই:
দেশপ্রেমের গল্প রেখে যাই, জীবন নয়।

আর যারা থেকে যায়?
তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়—
পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং,
পালানোর পথ এখানেই।

এই তো আমার দেশ—
যেখানে স্বাধীনতা মানে অনুমতির ফর্ম,
চেতনা মানে দলের মিছিল,
আর ‘বাংলাদেশ’ মানে—
একটি কর্পোরেশনের নাম,
যার মালিকানা চলে
উত্তরাধিকার সূত্রে।