আমি ছিলাম ভুল বানান
আমি সমাজে শুদ্ধ বানানে জন্মাইনি—
আমাকে লেখা হয়েছিল এক নিষিদ্ধ পাণ্ডুলিপায়,
যেখানে তাদের কলম কাঁপছিল—
আর এক অনিচ্ছাকৃত অক্ষর
সমাজ গড়ে তোলে এক অননুমোদিত সত্তা
হাটে-ঘাটে, পাড়া-মহল্লায়
আমার নাম "পাপের ফসল।"
আমি সময়ের সন্তান নই—
আমার কোনো জন্মক্ষণ নেই।
সেদিন সময় নিজেই ছিল নির্বাক,
আর সৃষ্টি থমকে গিয়েছিল
নিজেরই ছায়ার ভেতরে
আমি ভেসে উঠি সবার চোখে মুখে
অনাকাঙ্ক্ষিত "পাপের ফসল।"
আমি ছিলাম না আকাশের, না মাটির,
ছিলাম সেই শূন্য ব্যবধানের,
যেখানে সমাজ মুখ ফিরিয়ে নেন,
আর পৃথিবী বলে— “তুমি আমার নও।”
আমার মা ছিলেন এক পাথুরে নিঃসঙ্গতা,
যিনি গর্ভে ধারণ করেছিলেন ভয়—
ভালোবাসেননি, ঘৃণাও করেননি—
শুধু নিঃশব্দে আমায় নামিয়ে দিয়েছিলেন
এক বিস্মৃত পৃথিবীতে।
আমার বাবা ছিলেন নৈঃশব্দ্যের প্রতিমা—
যিনি নিজের অস্তিত্ব লুকিয়ে রেখেছিলেন
সময়ের অতলে।
তিনি আমায় ডাকেননি, ছোঁয়াননি—
শুধু বলে গিয়েছিলেন,
“যা, বেঁচে থাক— যদি পারিস।”
তুই আমার কেউ নাহ
তুই এক "পাপের ফসল।"
আমি প্রেমের সংজ্ঞা জানি না—
কারণ প্রেম আমাকে ছুঁয়ে যায় না,
আমার ছায়ায় আগুন থাকে,
আমার নিঃশ্বাসে জমে ওঠে ধোঁয়া
কুন্ডলী পাকাইয়া হাঁটি একলা
কারণ আমি "পাপের ফসল।"
আমি প্রার্থনায় নই, প্রশ্নে আছি
আমি কারো দোয়ায় নেই—
যার কাছে হাত তুলি,
সে থাকে চুপ
আর যে উত্তর দেয়,
তার কোনো দেখা নেই
মুখে মুখে নাম আছে
তুই একটা "পাপের ফসল।"
আমি সেই ভুল,
যে ভুল কেউ স্বীকার করেন না,
আমাকে মুছে ফেলার জন্য
পাড়াপ্রতিবেশি আত্মীয় স্বজন
রাতের আকাশে অন্ধকার আঁকেন
আর আমায় ডাকেন
"পাপের ফসল।"
আমি প্রশ্নের মতো—
যার উত্তর দিলে ভেঙে পড়ে সত্তা
আমি ছায়ার মতো—
যে কখনো আলোয় দাঁড়ায় না
কারোর সাথে মিল নেই
আমার নাম "পাপের ফসল। "
আমি সমাজের ভুল বানান—
এক অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চারণ,
যাকে কোনো ধর্মগ্রন্থ স্বীকার করে না,
তবু প্রতিটি মানুষের নিঃশ্বাসে
ভালো নামহীনভাবে বাস করি
তবুও আছে নাম "পাপের ফসল।"