মানুষ তার এক জীবন কাটিয়ে দেয়,
অভিমান করে
একটা ভাঙা চেয়ারে বসে
কাটিয়ে দিতে পারে সারা জীবন,
যে চেয়ারে একদিন দু’জন বসার স্বপ্ন ছিল
সে চেয়ার একজন বসে থাকে যুগের পর যুগ
গরম চায়ের কাপ, ঠান্ডা হয়ে যায়—
যাকে দেওয়া কথা ছিল
সে আর ফেরে না।

সকাল আসে ঘুমহীন চোখে,
যেখানে ঘুম নয়, জমে থাকে অসংখ্য “কেন?”
কেন আমি বোঝাতে পারিনি?
কেন ও বুঝে উঠতে পারলো না?
কেন আমি চেয়েছিলাম একটু বেশি?
এই প্রশ্নগুলো ধীরে ধীরে স্নায়ুর মধ্যে
কাঁটার মতো গেঁথে যায়।

সে আজ আর কারো কাছে নালিশ করে না
কারণ সে শিখে নিয়েছে—
ভালোবাসা না পাওয়ার চেয়ে,
বুঝতে না পারার যন্ত্রণা বেশি গভীর।

তাকে এখন আর কেউ ফোন করে না,
কেউ আর বলে না—
তুই না থাকলে চলতো না।
সে আর কারো “জরুরি” তালিকায় নেই
এক সময় ছিল,
কিন্তু এখন সব ব্যস্ত,
সবাই ঠিকঠাক...
শুধু সে ভুলে গেছে কবে শেষবার
কোনো চোখ তাকে খুঁজেছে।

বাড়িতে এখন অনেক লোক,
শব্দ, আলো, আয়োজন,
কিন্তু তার ঘরটায় আলো ঢোকে না,
কারণ সে আর কাউকে জানাতে চায় না—
এই অভিমানটার গভীরতা ঠিক কতখানি ভয়ংকর।

সে সব বোঝে—
কে অভিনয় করে, কে আসলে থাকে,
কে কেবল উপস্থিত, আর কে অস্তিত্বের শরিক
তবুও কিছু বলে না, কারণ সে জানে—
যা বলেছি, তা কেউ শুনবে না
আর যা বুঝেছি, তা বলার প্রয়োজন নেই।

দুপুরে গরম ভাতের গন্ধে হঠাৎ মনে পড়ে—
কেউ থাকলে বলত, পাতে আরেকটু ভাত দেই।
কিন্তু নেই, কেউ নেই,
বন্ধুরাও কেবল উৎসবের ফ্রেমে থাকে,
কখনও কেউ আয়ুষ্কাল জুড়ে নয়।

সে জানে, তার জীবনের প্রতিটি মাইলফলকে
কেউ ছিল না—
যখন চাকরি গেল, যখন প্রেম ভেঙে গেল,
যখন সে কান্না চেপে বসে ছিল হাসপাতালের বেঞ্চে
একটা ‘নরম হাত’ চাওয়ার অপেক্ষায়
কিন্তু কেউ আসেনি।

এভাবেই সে গড়ে তোলে নিজের ভিতরে
একটা ভেতর জগৎ কবরস্থান,
যেখানে প্রতিদিন সে কবর দেয়
একটা করে অসমাপ্ত স্বপ্ন,
একটা করে না বলা কথা,
একটা করে মানুষ—
যারা ছিল, কিন্তু থাকলো না।

তবুও সে অভিমান করে,
কারণ সে ভালোবেসেছিল—
বুকের সমস্ত জমি দিয়ে, নিজের সমস্ত চাওয়া দিয়ে
তাই সে ফিরেও যেতে পারে না,
ভালোও বাসতে পারে না— নতুন করে।

সে শুধু চুপ থাকে
চুপ করে যায় না,
চুপ থেকে বেঁচে থাকে।

এভাবেই…
মানুষ তার এক জীবন কাটিয়ে দেয়, অভিমান করে
বেঁচে থাকে—
না বলা কথাগুলোর মাটির নিচে,
যেখানে সে নিজেই নিজের সমাধি খুঁড়ে রাখে,
কেউ যেন এসে পড়ে না,
কেউ যেন দেখতে না পায়—
এই নিষ্প্রভ চোখে এখনও-
একটু ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখা আছে।