আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে আলো থাকে না।
থাকে তারের গোলকধাঁধা, দেয়ালে অসমাপ্ত সুইচবোর্ড, ছাদ থেকে ঝুলে থাকা সাদা-কালো তারের বন।
মানুষ ভয় পায়—"কারেন্ট আছে বুঝি!"
আমি ভয় পাই না।
কারণ আমি জানি, কে কোথায় ঘুমিয়ে আছে, কে জেগে আছে।
আমার হাতেই তো সেই ঘুম পাড়ানো-জাগানোর মন্ত্র।
আমি মাথা নিচু করে কাজ করি, যেন বিদ্যুৎকে অসম্মান না করি।
আমি চুপচাপ সার্কিট বুঝে নিই, বোর্ডের ভিতর সাপের মতো প্যাঁচানো তারগুলোকে গল্প বলি—
"এইদিকে এসো, ওদিকে যেও না, মানুষ জেগে উঠবে আলো পেয়ে।"
আমি কখনো নায়ক হই না, কখনো কেউ বলে না—"ভাই আপনার জন্যই ঘরে আলো জ্বলে!"
তবু আমি জানি, একটা সুইচে চাপ দিলেই যখন জ্বলে উঠে টিউবলাইট,
একটা বাচ্চা খুশিতে চিৎকার করে ওঠে—
তখন আমি ঈশ্বরের মতো নিঃশব্দে হাসি।
আমি জীবন নিয়ে খেলি না, আমি জীবন রক্ষা করি।
আমি জানি কোন তারে কত ভোল্ট, কোন সার্কিটে কত ধৈর্য লাগে।
ঘরের আলো শুধু সুন্দরের জন্য নয়, নিরাপত্তার জন্য।
আর সেই নিরাপত্তার দেয়াল আমি গড়ে দিই—
নেই কাব্য, নেই ছড়া,
তবু প্রতিটি কাজ আমার নিরব কবিতা।
আমি ইলেক্ট্রিশিয়ান।
আমি আলোর ভাষা জানি।
আমি কারেন্টের তর্জমা করি।
আর প্রতিটি সুইচে, প্রতিটি ফিউজে,
আমি রেখে যাই আমার নামহীন স্বাক্ষর।