জাগে এক নদী, নিরবধি ধারে,
চরণছায়া ফেলে আঁধার পারে।
তার জল নিস্তব্ধ, ধ্বনি নেই বাঁকে,
তবু যে ছোঁয়ায় গলে তার পাকে।

অতল বুকেতে নীল স্বপ্ন রাখে,
জ্বালায় না আগুন, শীতলতা ঢাকে।
স্রোতের ভিতর সে মুখ ঢেকে কাঁদে,
কে দেখে ব্যথা জলের আড়াল বাঁধে?

অপর পারে এক গিরি দাঁড়িয়ে,
রোদে পোড়ে, ধোঁয়ায় ধূসর পায়ে।
নয়নে বিজয়, কণ্ঠে গর্জন,
ভিতরে নীরব এক নিষ্ফল মন।

সে জানে না কাঁদা, সে পরে না ভাঙায়,
তবু দিনে দিনে সে থামে তার  ডাঙায়
কেন যেন পাথর নরম হয় চুপে,
তপ্ত বুকে আসে শীতলতা রূপে।

নদী তাকে ডাকে না, শুধুই দেয় জল,
ধুয়ে দেয় ক্লান্তি, গোপনে ছল ছল।
"এসো না বলি,"— তবু ফেরায় না কভু,
ব’সে থাকে প্রণয়িত নয়নে শুভ্র প্রভূ।

একদিন গিরি বলে— “তুই রইলি চুপ,
আমি ডাকিনি তো, তুই এলি কিসে রূপ?”
নদী হাসে ব’লে— “তুই গর্জেছিস বহু,
তবু থেমে দাঁড়াস— কেন জানিস কাহু?”

“আমি পোড়াই না তোর আগুনে ম্লান,
আমি শুধু বয়ে যাই, তোর মনের টান।
আমি তরল, আমি স্নিগ্ধ, আমি তোর ছায়া—
তুই গিরি হয়ে থাকিস, আমি নদীই চাইয়া।”

এইভাবে যুগে যুগে, জল-শিলা-মায়ায়
গড়ে ওঠে সংসার, না বলা কথায়।
না ছিল বিয়ে, না ছিল ছোঁয়া,
ছিল শুধু ভালোবাসা— অদৃশ্য ধোয়া