উপন্যাসিক  
                                    
সার্থক জীবন বলতে যেটা বোঝায়  তেমন তরও জীবন কোনও দিনও আমার ছিল না।এবং নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে যে টুকু অনুমান হয় তাতে ভবিস্যাতে যে তেমন সার্থকতা পাবও দূর স্বপ্নের সে আশা করি না। জানি হয় তো অনেকেই মনে মনে ভাববেন যে এবার আবার কেমন তরও কথা হল ? কিন্তু নিজেকে আমি হয় তো আর সবার থেকে অনেকটাই বেশি চিনি আর সেই চেনার বিশ্বাসেই বলছি হবে না গো হবে না । আমার দ্বারা কিছুতেই হবে না। কিন্তু তার পরেও এঁটুলি যেমন চামড়ার সাথে কামড়ে ধরে থাকে ঠিক তেমন প্রসুন বাবু মানে ঘোষ ও গুহ পাবলিশার্সের কর্তা প্রসুন দা জোরাজুরি করেই চলেছে ।
তীর্থঙ্কর বাবু আমাদের জন্য একটা উপন্যাস লিখতেই হবে । অনেক বছর ধরে আপনি কিছু লিখছেন না প্লিস এবার বইমেলার জন্য আপনাকে লিখতেই হবে ।
হবে না প্রসুন দা । আপনি বুঝতে পারছেন না আমার দ্বারা হবে না । এখন আর কোনও লেখা আমার হাত দিয়ে বেরোয় না। আর আমি তো আর পাঁচজন প্রথিজসা সাহিত্যিক নই। আর না আছে তাদের মত অমন কল্পনা শক্তি । আমি যে সাতটা উপন্যাস লিখেছিলাম সেটা ছিল আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ।শুধু মাত্র মনে করে করে লিখে গেছি আর তো কিছুই নয়।
আর সত্যি কথা বলতে আমার জীবনে ঘটা আর এমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই জাতে আপনাদের কথা অনুযায়ী একটা গল্প হতে পাড়ে ।
আপনি বুঝতে পারছেন না তীর্থঙ্কর বাবু আপনার লেখা পাবলিক চায়। আপনার লেখার ডিমান্ড কি বাজারে তা আপনি নিজেও জানেন না। আপনার শেষ লেখা ২০০৭ সালের ঐ যে উপন্যাসটা “ছোটো প্রশ্ন” এখনও অবধি বেস্ট সেলার বুক যেটা আপনিও জানেন। কোনও কথা শুনবো না এবার আপনাকে আমাদের জন্য না হোক আপনার পাঠকের জন্য কিছু লিখতেই হবে । আর তা ছাড়া আপনাকে যে আপনার জীবন রিলেটেড কিছু সাবজেক্ট নিজেই লিখতে হবে এমন মাথার দিব্বি তো কেউ দেয় নি। পারিপার্শ্বিক কত ঘটনাই তো রোজ ঘটছে তার মধ্যে থেকেই একটাকে সাবজেক্ট করে যা হোক কিছু লিখে দিলেই তো হল আর তা ছাড়া তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী এই বছর আবার কলম ধরছে পাঠকদের জন্য। এই কথাটাই পাবলিকদের জন্য যথেষ্ট । তাতেই আপনার বই বেস্ট সেলার হবে যাবে ।
আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না প্রসুন দা ?
কোন কথাটা বলুন তো ?
এই যে বললেন না পারিপার্শ্বিক এতো সাবজেক্ট আছে । আপনি কোন সাবজেক্ট গুলোর কথা বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পাড়লাম না ।
আরে মশাই আপনি টি ভি দেখে না । নাকি ?
রেপ, চিটফান্ড, বিষমদ, স্টুডেন্টরা শিক্ষক পেদাচ্ছে এমন কত সাবজেক্ট তো রয়েছে ।
প্রসুন দা আপনি এগুলো সাবজেক্ট বলছেন ? সরি প্রসুন দা আমার দ্বারা এই সময়  বা  কোনও সময়ই এই সব বিষয় কে সাবজেক্ট করে লেখা আমার দ্বারা হবে না।
আমি তো আপনাকে আগেই বললাম এমন ভাব প্রবন হয়ে কপ্লনা করে লেখা আমার দ্বারা হয় না। তাই তো আমি লেখা ছেরে দিয়ে শুনতে অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী ফুঁড়িয়ে গেছে । আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।
ধুর মশাই, ঐ সব ক্ষমা করা ফুঁড়িয়ে যাওয়া রাখুন তো আমি আজ রেডি হয়েই এসেছি । দেখুন বইবেলা বাকি আর মাত্র তিনমাস এর মধ্যে সরস্বতী সরস্বতী বলে লেখা শুরু করে ফেলুন দেখি । আর এই নিন ৩০০০০ হাজারের একটা চেক। তারিখ লিখিনি ।
আপনি ড্রপ করার আগে লিখে নেবেন । এখন আমি আমি উঠি । আগামি সপ্তাহে ফোন করবো ক্ষণ। লেখা শুরু করেছেন কিনা জানার জন্য ।
প্রসুন দা আপনি বৃথাই আমাকে জোরাজুরি করছেন যেটা হবে না সেটা নিয়ে কেন চেষ্টা করছেন । আর আপনি চেকটা প্লিস নিয়ে যান ।
আরে রাখুন তো তীর্থঙ্কর বাবু । ঐ কথাই রইল আমি পরের সপ্তাহে ফোন করছি।
প্রসুন দা আপনি চেকটা না নিয়ে গেলে এই ভাবেই পড়ে থাকবে আর আসছে সপ্তাহে বৃথাই ফোন করবেন ।
ঠিক আছে সে দেখা হাবে বলে প্রসুন ঘোষ সোফা থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল।
তীর্থঙ্কর সিঙ্গেল সোফাটা মধ্যে একটু হেলান দিয়ে বসে মনে মনে ভাবতে লাগলো যার সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই । কোনও দিনও ছিল না। তাকে যত চেষ্টাই কর কিছুই সৃষ্টি করতে পারবে না । পনেরো বছর ধরে তো শুধু সুদীপ কেই ভাঙিয়ে খেলাম ।  আজ যে সুখ্যাতি আমার, তা তো আমার কোনও দিনও প্রাপ্য নয় ।পুরো তাই তো সুদীপের ।
ওর  তো চোখে ছিল সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন । সারা জীবন ধরে কত যত্ন করে একটা একটা করে সাত তা এমন দুর্লভ উপন্যাস লিখেছে। আজ যদি বেঁচে থাকতো হয় তো আরও এমন সেরার সেরা রত্ন দিত।