রোজকার মত আজও রাতে সদানন্দ রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলাম,
         হটাৎ দেখা এক মায়ের সাথে,
         কোলে একটি ছোট্ট শিশু,
         বয়স ৩-৪ বছর হবে।
আমাকে ডেকে বললেন, বাবা
তুমি বাংলা বোঝ...?
আমি কিছুটা অবাক হলাম,  কথাটা শুনে
তারপর উত্তর দিলাম, কেন...?
তিনি বললেন, "এদিকে একটু দরকারে এসেছিলাম,
কাছে ৩৭০ টাকা ছিল, ওনার কাছে।"
বলতে, একটু দূরে এক বৃদ্ধ মানুষের দিকে চোখ পড়ল...
তাঁর গাল সম্পূর্ণ সাদা দাড়িতে পূর্ণ,
বয়স ৫০-৫৫ বছর হবে।
বললেন, টাকাটা চুরি হয়ে গেছে...!
রাতও অনেক হয়েছে,
বাড়ি সোনারপুর-এর রাজপুর এলাকায়।
      কি করে বাড়ি ফেরত যাবেন, সেটাই সমস্যার কারন,
কারন আর কিছু নয় ১২ টা টাকা.........
যদি তাকে কেউ দেয়, তাহলে সে বাড়ি ফিরতে পারে...!
কথাটা শুনে হটাত মনে পড়ল......
বহুবার এইভাবে রাস্তায় অন্যের উপকার করতে গিয়ে ঠকে যাওয়া অথবা বিপদে পড়ার কথা।
তাই অন্য কোনরকম কথা না বলে, একটি শব্দে শেষ করলাম - "নেই"।
কিন্তু বলার সাথে সাথে মন মানল না,
তাই নিজ স্বভাব দোষে, সন্দেহের বশে...
অনেক দূর হতে তার পিছু করতে লাগলাম।
দেখলাম, কিছুদুর গিয়ে রাসবিহারীর কাছে এসে তিনি,
আবার অন্যের কাছে চাইছেন,
কিন্তু সেখানেও মনে হয় পেল না কিংবা পেয়েছিল জানি না...!
কিন্তু যখন দেখলাম,
রাস্তার বাসস্ট্যান্ডে এসে শিশুটিকে রাস্তা ভরা আলো আর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ভোলাবার চেষ্টা করছেন......!
মনটা আর ব্যাকুল  হয়ে উঠল তাদের প্রতি,
মাথা হার মানতে শুরু করল মনের কাছে।
ভাবলাম ১২ টা টাকা দিয়ে আবার নয় ঠকবো,
কিন্তু তাতে কি বা এসে যাবে...!
            কিন্তু............!
কিন্তু এখন যদি না দিয়ে চলে যাই, তাহলে রাতে হয়ত বিবেকের দংশনে ঘুমতেই পারবো না...!
তাই কিছুক্ষন ওই রাস্তায়  টহল দিতে থাকলাম,
কিছুক্ষন পরেও তাদের যখন বসে থাকতে দেখলাম.........
তখন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম,
টাকাটা না দিয়ে, আমি বাড়ি ফিরবো না।
ভেবে নেবো, ওটা খেয়ে ফেলেছি।
অন্ততঃ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে তো পারবো।
ভাবলাম ১২ টাকা বাঁচিয়ে
  নিজের বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে
      রাতে না ঘুমানোর চেয়ে, ওটা
         দিয়ে মনের শান্তি কেনা অনেক ভালো।
ভাবলাম, যদি এটা সত্যি হয়...!
      যদি এটা আমার সাথে হয়,
            আর আমার জায়গায়  যদি অন্য কেউ......!
                 আমার সাথে এটা করে...!
                     তাহলে কি হত...!
এক মুহূর্তে সব কিছু শূন্য হয়ে গেল,
কেমনভাবে জানি না, গুলিয়ে গেল সব হিসাব।
তাই ভাবলাম উনি যদি আমাকে মিথ্যে কথাও বলে থাকেন,
তাহলেও জানবো.........!
ঈশ্বরকে তো দেখিনি, তার বদলে নয়
এই অল্প মূল্যের বিনিময়
কোন মানুষরুপি ঈশ্বরের সেবা করলাম।
তাই গিয়ে যেচে দিয়ে এলাম,
তাদের সেই ১২ টা টাকা...
বললাম আমার কাছে টাকা থাকা সত্ত্বেও তাদের না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার কারন,
শুনে তারা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন,
ও পরে খুশি হলেন।
খুশি হলাম আমিও,
ফিরে এলাম বাড়ি,
আর দেখলাম যে,
যে অমুল্য খুশি, আজ প্রায় দুর্লভ,
তা কেমন সহজে, অনায়াসে
শুধুমাত্র ১২ টাকার বিনিময়ে
কি সস্তায় কিনে ফেলেছি।
আর তা ভেবে নিজের মনটা যেন,
আরও বেশি খুশি হয়ে গেল।


সত্যিই মনে থাকবে এই ঘটনা,
                  মনে থাকবে,
                       মাত্র এই ১২ টা টাকা............