প্রিয়তম,
কেমন আছো তুমি?
এতদিনে কি একবারও মনে পড়েনি আমার কথা?
আমার দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি কি একবারও
ব্যাকুল করেনি তোমার হৃদয়?
আজ কেন জানিনা তোমার কথা ভীষণ মনে পড়ছে;
আবছা ফিকে হয়ে যাওয়া স্মৃতি পুনরায় রঙিন হয়ে
আমার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে-
তাকে ফেরানোর সাধ্য আমার নেই!
আমি জানি এতে হয়তো কিছুই হবে না, কিন্তু-
অতীতের সুখময় স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে যে!
তুমি কি সেই আগের মতোই আছো,নাকি-
বদলে ফেলেছ জীবন-যাপনের ধারা?
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় চা পাও?
দাড়ি কাটার জন্য গরমজল ঠিকমতো পাও তো?
অফিসের টিফিন নিতে ভুলে যাও নাতো?
ঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া ক’র তো?
তোমার যা ভুলো মন!
কাজের মেয়ে রীতার মা ঠিক সময়ে আসে?
ঘর-দোর পরিস্কারে ফাঁকি দেয় না তো?
ওর প্রতি নজর রাখবে-যা চুরির স্বভাব না!
আচ্ছা,তোমার মনে আছে-সেই সেবার
ড্রেসিংটেবিল থেকে আমার নেকলেসটা চুরি
করেছিল,তারপর-ধরা পরে কি কান্না!
অভাবের কথা মাথায় রেখে ওকে ক্ষমা করেছিলাম।
থাক্ ওসব কথা!
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফেরো,নাকি-
মাতাল হয়ে রাত দুপুরে?ড্রিংক্স বাড়িয়েছ?
লক্ষীটি বেশী ড্রিংক্স ক’রো না,
শরীরের প্রতি একটু নজর দিও,
সিগারেট খাওয়াও একটু কমিয়ো।
অনেক কথাই তো হ’ল;এখন বলতো-
তোমার সেক্রেটারী সুরঞ্জনা না নীলাঞ্জনা,
তার খবর কি?
তার কাছে যা পেয়েছ তাতে তুমি খুশি?
আমার শতছিন্ন জীবনে তার অবদান যে অনেক-
কি করে ভুলি তাকে!
কালবৈশাখীর মত আমার জীবনে কখন যে কালো
একটুকরো মেঘ ভেসে এসেছিল তা বুঝতেই পারিনি;
যখন বুঝলাম তখন তা রুদ্রমূর্তি ধারণ করে উড়িয়ে
নিয়ে গেল আমার সাজানো সংসার।
সামান্য এক টুকরো মেঘ-সন্দেহের মেঘ,
কি অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী!
আমি চলে এলাম।
তুমি অভিমানিনীর মান ভাঙাতে কিছুই করলে না;
তোমার নির্লীপ্ততা আমাকে চলে আসতে বাধ্য করেছিল।
অগ্নিদেবতার সামনে অঙ্গীকার করা স্ত্রীকে অসহায় ও
একাকীত্বের নাগপাশে আবদ্ধ করতে পাঠালে এক টুকরো কাগজ!
প্রাপ্তিস্বীকারের পর আমি অবাক হয়ে যায়নি,কিছু মনেও করিনি।
দিনের পর দিন আমার সঞ্চিত অভিমান
আমায় কুরে কুরে শেষ করে দিয়েছে।
আমি চেয়েছিলাম-ভীষণভাবে তোমায় চেয়েছিলাম!
আমার অভিমানশূন্য হৃদয় দিনের পর দিন তোমার
ডাকের জন্য প্রতীক্ষা করেছিল।
অবশেষে,তুমি আমার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে
দিলে ডাক-বিচ্ছেদের ডাক!
না-না, আমি তা চাইনি;বিশ্বাস ক’র আমি তা
চাইনি।এ ডাক আমি চাইনি!
আমি যে চেয়েছিলাম-মিলনের ডাক।
আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি,
তোমার ডাকে সাড়া দিলাম শুধুমাত্র তোমাকে
খুশি করার জন্য!
তুমি খুশি তো প্রিয়তম?
আজ জীবনের মূল্যায়ন করতে বসিনি,
শুধু তুমি সুখে থে’ক;
অভিশপ্ত জীবনে তোমার সুখস্মৃতি রোমন্থন
করতে করতে আমি বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।
শুধু তুমি সুখে থে’ক;প্রিয়তম-
শুধু তুমি সুখে থে’ক।।